হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ দীর্ঘ ৪৯ বছর ছিটমহলের অধিবাসীরা বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত ছিল। ছিটমহলবাসীর নাগরিক সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিলিপ্ত ছিটমহলের অবকাঠামোসমূহ উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এলজিইডি একটি প্রকল্প প্রনয়ন করে, যা ৫ জানুয়ারী ২০১৬ এ একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। ছিটমহল জেলাগুলো হচ্ছে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারী) বিকেলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম লালমনিরহাটের পাটগ্রাম আঙ্গরপোতা দহগ্রাম ও বাঁশকাটা ছিটমহলের এলজিইডি’র বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী সাংবাদিকদের আরও বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের অভ্যন্তরেএবং ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে যায়। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিটমহল বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের সীমানাভুক্ত এবং ভারতের অন্তর্গত বাংলাদেশের ছিটমহলগুলো ভারতীয় সীমানাভুক্ত হয়।
ছিটমহল অধিবাসীর জন্য সড়ক, ব্রিজ/ কালভার্ট ও সামাজিক অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত ২৫৮.১৭ কিলোমিটার সড়ক, ৬৩৯.১৩ মিটার ব্রীজ/ কালর্ভাট, ৬টি কমিউনিটি সেন্টার, ২৪টি মসজিদ, ৯টি মন্দির, ৫টি গ্রোথ সেন্টার / গ্রামীণ হাটবাজার, ৪টি শ্মশান ঘাট, ৪টি কবরস্থান, ৬টি ঘাট নির্মাণ এবং ৩.০৫ কিলোমিটার খাল খনন/ পুন:খনন করা হচ্ছে। এসকল অবকাঠামোর মধ্যে ২১১.৮০ কিলোমিটার সড়ক ৬৩৯.১৩ মিটার ব্রূীজ/ কালভার্ট নির্মাণ, ৬টি কমিউনিটি সেন্টার, ৫টি মন্দির, ২০টি মসজিদ নির্মাণ, ২টি গ্রোথ সেন্টার/ গ্রামীণ হাটবাজার, ৪টি শ্মশান ঘাট,৪টি কবরস্থান, ৬টি ঘাট নির্মাণ, ৩.০৫ কিলোমিটার খাল খনন/ পু:নখনন ইত্যাদির কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এসব নির্মাণ হয়েছে ২২৫ কোটি টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর জীবন জীবিকা বদলে যেতে শুরু করেছে।সুবিধাবঞ্চিত ছিটমহলবাসী অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন, ফলে তাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যবসা- বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য,এ প্রকল্প ছাড়াও এলজিইডি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম -৪ এর আওতায় বিলুপ্ত ছিটমহলে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। এলজিইডির এসব কর্মকাণ্ড বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
প্রকল্পের সার্বিক কর্মকাণ্ডে ভাগ্যহত ছিটমহলবাসীর জীবন-জীবিকার ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি ছিটমহল পরিদর্শনে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাঁশকাটা ছিটমহল পরিদর্শন করেন।এসময় লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ খান, জনস্বাস্থ্যের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান, লালমনিরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল প্রমুখ সঙ্গে ছিলেন। এলজিইডি মন্রী নির্মিত বাঁশ কাটা কমিউনিটি সেন্টারে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করেন। ছিটমহলবাসীর পক্ষে নজরুল ইসলাম ওই মতবিনিময় সভায় তাদের আমূল বদলে যাওয়া জীবন চিত্র তুলে ধরেন এবং তাদের মত ভাগ্যহতো মানুষের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অবদানের অখুন্ড কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এলজিইডি মন্ত্রী ভবিষ্যতে এসব ছিটমহলবাসীর সঙ্গে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।