হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা এলাকায় শ্বশুরের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ একমাস পেরিয়ে গেলেও অন্তঃসত্ত্বা তৌহিদা বেগমের (২১) মামলা আমলে নেয়নি বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় শ্বশুর ও ননদের নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা তৌহিদা বেগম (২১) তিনি উপজেলার পশ্চিম সারডুবী এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (১৪ই জানুয়ারী) দুপুরে রফিকুল ইসলামের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তৌহিদা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, শ্বশুর ও ননদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে একমাস আগে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। উল্টো আমার স্বামীর বিরুদ্ধে বাবাকে বেধড়ক মারধরের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন।
এলাকাবাসী ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে রফিকুল ইসলাম দীর্ঘ ৯ বছর ঢাকায় কর্মস্থলে থাকার ফলে উপার্জনের সমস্ত টাকা বাবাকে পাঠিয়ে জমি বন্ধক নিতে বলেন। রফিকুল ইসলামের বাবা আব্দুল আজিজ তার ছেলের পাঠানো টাকায় জমি বন্ধক নেন ঠিকই কিন্তু,সেই জমি বন্ধকের সমস্ত কাগজ-পত্র নিজ নামে করে নেন।
করোনা পরিস্থিতিতে রফিকুল ইসলামের চাকরি চলে যাওয়ায় বাড়িতে ফিরে বাবার কাছে বন্ধকী জমি এবং সমস্ত টাকার হিসেব চাইলে বাবা ও ছেলের মাঝে প্রায় আট লক্ষ টাকা নিয়ে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। গত ১৪ই ডিসেম্বর বাড়ির পাশে বন্ধকী জমিতে রফিকুল ইসলাম ভুট্টা লাগাতে গেলে তার বাবা বাধা দেন। এসময় তাকে ও তার স্ত্রী তৌহিদা বেগমকে মারধর করেন তার বাবা আব্দুল আজিজ ও তার মেয়ে আজিতোন নেছা।
এরপর স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় রফিকুল ইসলাম ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তৌহিদা বেগমকে উদ্ধার করে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তৌহিদা বেগম শ্বশুর আব্দুল আজিজ (৫৫) ও তার ননদ আজিতোন নেছা (২৫)কে আসামী করে হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ দেওয়ার পর একটি মহল মিমাংসার নামে দুই দফা বৈঠক করেও সঠিক কোন সমাধানে পৌঁছাতে পারেননি। এরপর একমাস পেরিয়ে গেলেও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ তদন্তে এসেও তৌহিদা বেগমের অভিযোগটি আমলে নেয়নি।
তৌহিদা বেগম আরও জানান, শ্বশুর ও ননদের আক্রমনের ফলে তার পেটের সন্তানের অবস্থান খারাপ হওয়ার ফলে চিকিৎসক তাকে পরিপুর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দেন। আমি নারী কি বিচার পাব না?
আব্দুল আজিজের বড়ভাই জসিম উদ্দিন (৬৬) বলেন, আমার ভাতিজা রফিকুল খুবই ভালো ছেলে। সে তার বাবাকে মারতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে মাত্র। আর আমার ছোটভাই আব্দুল আজিজ আমাকে, আমার বউকে, পাড়ার অন্যান্য অনেককেই বিভিন্ন সময় আক্রমন করেছে, তার স্বভাব মোটেই ভালো নয়।
আব্দুল আজিজের দেওয়া মামলার প্রধান সাক্ষী এবং প্রতিবেশী আলহাজ্ব নুরুজ্জামান (টুরু) বলেন, বাবা এবং ছেলের এই ঝামেলা হতোই না। রফিকুলের পাঠানো টাকা দিয়ে নিজের নামে জমি বন্ধক নিয়েছে আবার ছেলে এই বিষয়ে কথা বলাতে তাকেই মারধর করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
তৌহিদা বেগমের বাবা তৈবর আলী (৬৫) বলেন, আমার মেয়ের উপর যৌতুকের টাকার জন্য তার শ্বশুর ও ননদ একের পর এক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। আমি আমার মেয়ের উপর নির্যাতনের বিচার চাই।
বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল বলেন, শ্বশুর কতৃক পুত্রবধুকে নির্যাতনের বিষয়টি জেনেছি। তাদের আইনী সহায়তা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছি।
মামলার তদন্তকারী অফিসার ইব্রাহিম খলিল মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমি তদন্ত করছি, সেবা পাওয়া সকল নাগরিকের অধিকার, এই ঘটনায় দ্রুত আইনগত সেবা প্রদান করা হবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।