প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানে এখনো অনেকে নজরদারিতে আছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা কাউকে ছাড় দিয়েছি কিনা সেটা হলো প্রশ্ন। আমাদের আমলে প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানে টার্গেটে রয়েছেন আমাদের দলের লোকেরা। আমাদের যারাই যখন ধরা পড়েছেন আমাদের পরিচয়ে, যেমন শাহেদ যেটা করেছে তাকে কিন্তু ছাড় দেয়া হয়নি। গতকাল সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের অনেক জনপ্রতিনিধি জেলখানায় আছেন। সরকার নিজেদের লোকদের ছাড় দিলে তো আরো দুর্নীতি-অনিয়ম বিস্তার করতো, ক্যাসিনো থেকে শুরু করে এখনো শুদ্ধি অভিযান চলছে। এখনো অনেকে নজরদারিতে আছেন।
দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ক্ষমতায় থেকে মানুষকে কী দিতে পেরেছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের যে দায়িত্বটি আমি পালন করছি, সেখানে চারটি মেগা প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলি টানেলের কাজ এগিয়ে চলেছে। সবগুলো আগামী ২০২২ সালে উদ্বোধন করতে পারবো। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য, নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন। ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়নই মূল চ্যালেঞ্জ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, করোনা সারাবিশ্বকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একদিকে করোনা মোকাবিলা করছি এবং অর্থনীতি সচল রেখেছি। ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ জায়গায় আছে। তিনি বলেন, সবদিক থেকে আমরা এগোচ্ছি, ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছি। করোনার জন্য অনেকে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসন করা এবং কাজ দেয়া একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের ইশতেহারে আছে বেকারদের কর্মসংস্থান। ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত আছে, সেটা প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন। ভ্যাকসিনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, জানুয়ারির শেষ নাগাদ ভ্যাকসিন আসতে পারে। একটি সরকার এত বছর ধরে ক্ষমতায় আছে, ফলে অসম্পূর্ণ কাজ করতে পারছে। আমাদের দেশে এক সরকার গেলে অন্য সরকার সেটি বাতিল করে। এমনও হতে পারে আওয়ামী লীগ করেছে বলে পদ্মা সেতু ভেঙে দেই। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় থাকতে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা দরকার। দীর্ঘদিন একটি সরকার ক্ষমতায় থাকলে সেখানে স্বেচ্ছাচারিতা বেড়ে যেতে পারে, এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, কিছু লোক তো খারাপ আছে। ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার দাপট দেখায়- এ রকম লোক আছে। তাদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক। যারা ক্ষমতার দাপট দেখাবে, আমরা কিন্তু কিছু কিছু শাস্তি দিয়েছি। তবে শাস্তি শুধু বহিষ্কার করা নয়। অনেকেই অনেক বড় জায়গায় থাকে, সেখান থেকে ছিটকে পড়ে। দল বিভিন্নভাবে শাস্তি দিতে পারে। শাস্তির প্রক্রিয়ার ধরন নতুন করোনার ধরনের মতো। শাস্তিরও নতুন ধরন আছে, আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শাস্তি দিতে পারি। একজন একটা বিশাল জায়গায় আছে, সেখান থেকে তাকে সরিয়ে দেয়াটা কি শাস্তি নয়? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি’র মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তামাশা ছাড়া কিছু নয়। বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো কোনো আন্দোলন করতে পারেনি। একটা খণ্ড মিছিলও করার সাহস দেখাতে পারে না তারা। মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি’র মহাসচিবের সামপ্রতিক বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা মামা বাড়ির আবদার। আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের নামে মধ্যবর্তী তামাশা চাই না। বিএনপি নেতারা ঘরে বসে পুলিশের গতিবিধি খেয়াল রাখে বলেও জানান তিনি। সেতুমন্ত্রী বলেন, নতুন বছরে নির্বাচনী ইশতেহার পূরণ করা ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের এখন বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বর্তমান সরকারের স্থায়িত্ব দরকার বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও আমরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পেরেছি। বিশ্ব আমাদের প্রশংসা করছে। সৈয়দ আশরাফের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল ছিলেন, তিনি দলের জন্য অনেক কাজ করেছেন আমি আজ তাকে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। পাশাপাশি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ অসুস্থ, তিনি আমার এলাকার মানুষ। আমি তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।