সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার কয়েক গ্রামের মানুষ বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে যখন এসব জিনিসপত্র মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে ঠিক তখনই তাদের নতুন করে বাঁচতে শেখায় শাহ্ আলম। তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নিজে এবং সেই সঙ্গে স্বাবলম্বী করেছেন এলাকাবাসীর মানুষদের।
নাগরপুর উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নের বর্নী, প্রয়াগজানী ও কোপাখীসহ কয়েকটি গ্রামের এই বাঁশ ও বেত শিল্প প্রায় দুইশ বছরের পুরনো পেশা। আর এসব গ্রামের মানুষ কুলা, ডালা, পলো ও মাথালসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতেন এবং কালের পরিক্রমায় এসব পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে যেতে থাকেন।
এই বাঁশ ও বেত শিল্পের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতেন বর্নী গ্রামের শাহ আলমের পূর্ব বংশরাও। দারিদ্র্যতার জন্য এসএসসি পাশ করার পর শাহ আলম আর লেখাপড়া করতে পারেননি। যার কারণে যোগ দেন বাবার পেশায় এবং চিন্তা করতে থাকেন যে এই শিল্পের আধুনিকায়ন করতে না পারলে এ অঞ্চলের শত শত মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। সেজন্য নতুন নতুন ডিজাইন ও তৈরির বিভিন্ন কলাকৌশল শিখেন কুটির শিল্পের ডিজাইনার চন্দ্রশেখর সাহার কাছ থেকে এবং তার তৈরিকৃত তৈজসপত্রগুলো একসময় রাজধানীর বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং তখন থেকে শাহ আলম এ পেশায় যুক্ত গ্রামের অন্যদেরকেও প্রশিক্ষণ প্রদানে সম্পৃক্ত করতে থাকেন।
তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে এসব এলাকার মানুষদের বাঁশের তৈরি আকর্ষণীয় রুচি সম্মত নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য এখন দেশ পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। এসবের মধ্যে ট্রে, চায়ের কাপ, বাসকেট, ফ্লোর ল্যাম্প, টেবিল ল্যাম্প, হ্যাকিং ল্যাম্প, ফলের ঝুঁড়ি, ফুলদানী, লেডিস ব্যাগ, থালাবাসন উল্লেখযোগ্য।
শাহ্ আলম ২০১২ সালে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের “শিলু আবেদ কারুশিল্প” পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৬ সালে লাভ করেন লোকশিল্প জাদুঘর প্রদত্ত পুরস্কার। এছাড়াও ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, ভুটান, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ তিনি কারুশিল্প বিষয়ক বিভিন্ন প্রদর্শনী ও কর্মশালায় অংশ নেওয়ার জন্য ভ্রমণ করেছেন।
স্বাবলম্বী ও স্বাবলম্বী করা শাহ আলম জানান, বাঁশ ও বেত শিল্পে তৈরি পণ্যগুলোর নকশা প্রণয়নের পাশাপাশি মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সকল প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কারিগর তৈরি করা সম্ভব এবং একইসাথে এই শিল্পের রপ্তানীমুখি বাজার বিস্তার করাও সম্ভব।”