আজ ২০২০-এর শেষ দিন। বিদায় নিচ্ছে বছরটি। রাত পোহালেই নতুন ইংরেজি বছর ২০২১। নতুন আশার অঙ্কুর জাগিয়ে সে আসছে। কিন্তু, ফেলে আসা বছরের দুঃস্বপ্ন মানুষ ভুলবে কিভাবে? একটি ৬০ ন্যানোমিটার-এর ভাইরাস পৃথিবীটাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে বিদায়ী বছরটিতে। কত মানুষ তাদের স্বজন হারিয়েছেন এই ভাইরাস-এর ছোবলে, কত বিখ্যাত মানুষ চলে গেছেন এই ভাইরাস-এর লেলিহান গ্রাসে।
কোভিড কিংবা করোনা, যে নামেই ডাকি না কেন, উইলিয়াম শেক্সপীয়ার তো বলেই গেছেন, নামে কিবা আসে যায়। সত্যিই যায় না।
এই ভাইরাস কাঁপিয়ে দিয়েছে আদ্দিস আবাবা থেকে এন্টার্টিকা কিংবা বাহারিন থেকে বাংলাদেশ।
এই ভাইরাস শুধু মানুষের প্রাণ নেয়নি। কর্মহীন বেকার বানিয়েছে পৃথিবীজুড়ে কয়েক কোটি মানুষকে। ঝাঁপ পড়ে গেছে বহু সংস্থার। মানুষ অবিশ্বাসের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছে। প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। তরুণ-তরুণীর জীবনের ছন্দে যতি পড়েছে। দাম্পত্য দুর্বিষহ হয়েছে। উপমহাদেশের প্রাণকেন্দ্র চায়ের দোকান বন্ধ হয়েছে। পার্ক, মিউজিয়াম বন্ধ, বন্ধ সিনেমা-থিয়েটার সমেত অন্য বিনোদনও।
৬০ ন্যানোমিটার-এর ভাইরাসটির এমনই ক্ষমতা যে, সে এই বিশ্বে মানুষের বদলে তৈরি করেছে যন্ত্রমানব। মানুষের অভিধানে ঢুকেছে অনেক নতুন কথা। কোভিড মানে যে একটি মারণাস্ত্র তা জেনেছে মানুষ। জেনেছে লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, জুম্ মিটিং, পান্ডেমিক, অক্সিমিটার প্রভৃতি শব্দগুলি। আর একটি শব্দ উচ্চারিত হয়েছে এই ২০২০ তে- ইনফোডেমিক। মিথ্যা খবরকে সত্যের মতো করে পরিবেশন করা। গত একবছরে ডিজিটাল মিডিয়ার সৌজন্যে কত গুজব যে সত্যির চেহারা পেয়েছে।
এই ২০২০ জন্ম দিয়েছে বহু স্বঘোষিত সাংবাদিক, অ্যাঙ্কর কিংবা চ্যানেল মালিকের। একটা স্মার্ট ফোন থাকলেই হল। যেমন ইচ্ছা শুট করে আপলোড করতে জানলেই হল। এটাতো এই ২০২০-এরই অবদান।
নিভৃতবাস শব্দটি এই ২০২০-তেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যেমন পেয়েছে সামাজিক দূরত্ব শব্দটি। এই পৃথিবী নিভৃতে সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে বড় একা হয়ে গেছে। ২০২১-এ আবার ফিরে আসুক পৃথিবীর হাসি। দূর হোক মৃত্যু, বেকারত্ব, নির্বান্ধব স্বার্থপর জীবন। জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক। নবআনন্দে জাগুক পৃথিবী। হাসুক অনাবিল।