জাতির সামনে কঠিন বিপদ আসছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সোমবার দুপুরে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে শীতকালে করোনা প্রতিরোধ ও করণীয় এবং শীতবস্ত্র বিতরণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরা নির্ভয়, সাংবাদিকরাই করোনাকালে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্ভীক সচেতন সংবাদ মাধ্যম ছাড়া কখনোই দরিদ্রতা নিরসন হবে না। সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হবে। একটা কথা আছে মন যেটা জানেনা চোখ সেটা দেখেনা। সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, আজকের সাধারণ মানুষ যেমন পর্যুদস্ত। আমরা প্রত্যেকেই অবহেলিত এবং পর্যদুস্ত। যারাই তাদের কথা বলতে চাইবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা সরকারের।
সরকার উপলব্ধি করে না সত্যটাকে কাছে আনলে সরকারের পরিকল্পনা অনেক সহজ হতো। সরকার তা না করে, যে সত্যটা তুলে ধরতে চাইবে, তার কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এই কণ্ঠরোধ করাটাই একদিন ওই রাজনীতিবিদকে কারাগারে নিয়ে যাবে। আমাদের জাতির সামনে কঠিন বিপদ আসছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সুবিবেচনা এবং সাহসের ক্ষেত্রে মোকাবিলা না করলে, জনসাধারণকে সম্পৃক্ত না করলে, এ সমস্যার সুরাহা হবে না।
করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন আসলে কে কয়টা পাবেন, সেটা আপনারা দেখেছেন। আমি মনে করি, এ কাজ অনেক সহজ হতো, সরকার যদি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতো। কম্পোলসারি লাইসেন্স বলে একটা নিয়ম আছে, এটা সুযোগ নিয়ে আমরা ব্যাপক আকারে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি। আপনারা জানেন অক্সফোর্ডে পেনিসিলিন আবিষ্কৃত হয়েছিল। কিন্তু তারা কখনোই এটাকে প্যাটেন্ট করেনি। তারা মনে করেছিল জনসাধারণের জন্য পেনিসিলিন উন্মুক্ত থাকবে। পেনিসিলিন যে পাত্রে আবিষ্কার করা হয়েছিল, তার একটি পাত্র তারা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে দান করেছিন। প্রতীকী অর্থে তারা বলতে চেয়েছিল গণস্বাস্থ্যও যেন এসব কাজে সম্পৃক্ত থাকে। আমি নিশ্চিত ড. ইউনুস এবং অন্যান্য নোবেল লরিয়েটরা যদি অক্সফোর্ডকে বলতো, তোমরা অতীতের মতো সহযোগিতা করো আমরা আমাদের দেশেই করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করি। দেশীয় গ্লোবের করোনার ভ্যাকসিন এগিয়ে রয়েছে। আমরাও ইচ্ছা করলে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি। তাহলে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন তৈরি হতো। দেশের প্রতিটা লোক ভ্যাকসিন পেত।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এন্টিবডি কিট তৈরির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরাই বিশ্বের প্রথম মার্চ মাসে এন্টিবডি কিট আবিষ্কার করেছিলাম। শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে জড়িয়ে ধরে বলতো, জাফরুল্লাহ জবর কাজ করেছো। কিন্তু সরকার প্রতিটা পদে পদে আমাদের কাটা বিছিয়েছেন। এখনও আমরা এন্টিবডি কিটের অনুমোদন পায়নি। এরপর অনেক দেশ এন্টিবডি কিট উৎপাদন করেছে। আমাদের কিটের অনুমোদন দিলে দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হতো। এন্টিবডি কিট আবিষ্কার করতে আমাদের ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ১০ কোটি টাকা দিয়ে আমরা অনেক বেশি গরিব মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল এন্টিজেন কিট আবিষ্কার করলো। সরকার আমাদের কন্ডিশন দিল এ কিট আমেরিকা থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে হবে। এতে আরও তিন কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। আজকে যদি এমন নিয়ম থাকত তাহলে বাংলাদেশে ওষুধ নীতি হতো না। বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রথম শ্রেণীর ঔষধ উৎপাদনকারী দেশ হতে পারত না।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক বন্ধুদের বলতে চাই, যতই আপনাদের বিপদ হোক, যেই নির্ভীক সাহসিকতার সাথে আপনারা কাজ করছেন, সেটাকে অব্যাহত রাখেন। সবাই মিলিত ভাবে কাজ করলে দেশের দরিদ্রতা অনেক কমবে। সবাই মিলে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। যতই বিপদ আসুক, আমরা মিলিতভাবে ন্যায় এবং নীতির জন্য আমাদের আন্দোলনকে অব্যহত রাখতে হবে। এই সাহসই বাংলাদেশকে সুন্দর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। সামাজিক বৈষম্য না কমলে আমি, আপনি, কেউই সুখে থাকতে পারবোনা।
এসময় উপস্থিত থেকে আরও আলোচনা করেন গণস্বাস্থের কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মঞ্জুর কাদির আহমেদ, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।