আর বাকি যাত্রীদের সনদ না থাকায় জরিমানা করা হয় বিশেষ বিমান পরিচালনা প্রতিষ্ঠানকে। বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জামিল বলেন, তারা জরিমানা মওকুফের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পায়নি। এ ছাড়াও তাদের ধারণা ছিল আইন না মানলে বাংলাদেশে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি আরো বলেন, ফ্লাইট অপারেটররা দাবি করেন, লিবিয়াতে আরটি-পিসিআর টেস্ট করার মতো সুবিধা নেই। এক্ষেত্রে আরটি-পিসিআর টেস্টের পরিবর্তে অ্যান্টিজেন টেস্ট রিপোর্ট গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে ৩ জন যাত্রী পিসিআর সনদ দেখাতে পেরেছেন।
লিবিয়ায় থাকেন রংপুরের মিঠাপুকুরের সাইফুল ইসলাম ও সুমন ইসলাম। সুমন ইসলাম ফিরেছেন সেই ফ্লাইটে। সাইফুল ইসলাম লিবিয়া থেকে বলেন, আমরা দুই ভাই আগুন প্রতিরোধক আসবাবপত্র নির্মাণ কোম্পানিতে চাকরি করি। আমার ছোট ভাই দেশে ফিরছে। তার কাছে সনদ ছিল না আমরা জানি। এখানে যখন টিকিট করা হয় তখন বলা হয়েছিল করোনা টেস্টের সনদ লাগবে। এরপর আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে যাই। কিন্তু এখানকার হাসপাতালের অবস্থা খুব একটা ভালো না। টেস্টের জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করতে হতো। আর রিপোর্ট সময়মতো পাওয়া যেতো কিনা এ নিয়েও সন্দেহ আছে। এরপর যে এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কাটা হয় তারা বলে দেয় রিপোর্টের প্রয়োজন নাই- আমরা ম্যানেজ করবো। বুধবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে সেখানে। কোনো যাত্রী করোনার সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো ফ্লাইটে দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। দুবাইয়ের যাত্রী সাব্বির রহমান ও কাওসার আহমেদ জানান, করোনার রিপোর্টের জন্য মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর বেসরকারি একটি মেডিকেল থেকে পরীক্ষা করান। যার রিপোর্ট পান বুধবার সকাল ১০টায়। যার জন্য প্রত্যেককে দিতে হয়েছে ৩ হাজার টাকা করে।
যুক্তরাষ্ট্রগামী যাত্রী আদিল আরফান বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে করোনা পরীক্ষা করি। এর জন্য ফি দিতে হয়েছে ১১শ’ টাকা।
গত কয়েক দিনে করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াই প্রায় ১৭০০ যাত্রী দেশে এসেছেন। এরমধ্যে ৬ জন করোনা রোগীও ছিলেন। সনদ ছাড়া যারা দেশে এসেছেন তাদের আইসোলেশনে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আক্রান্ত ৬ জন করোনা রোগীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া দেশে যাত্রী নিয়ে আসার কারণে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ কাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদুল আহসান মানবজমিনকে জানান, করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া কোনো যাত্রীকে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না- এ ঘোষণা আগে থেকেই দেয়া আছে। নিয়ম না মেনে যারা আসছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ৫ই ডিসেম্বর থেকে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের করোনা নেগেটিড সনদ বাধ্যতামূলক করে বিমানবন্দর ও বেবিচক কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যেও সনদ ছাড়াও এবং আক্রান্ত রোগীদের আসা-যাওয়া হচ্ছে বিমানবন্দরে। সূত্র জানায়, প্রায় ১৫টি এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইটে করে সনদ ছাড়াই যাত্রীদের নিয়ে এসেছে। এরমধ্যে রয়েছে, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স, মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্স, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া এয়ারলাইন্স, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, এমিরেটস, কুয়েত এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ও গালফ এয়ার ও বোরাক এয়ার।
গত ১৫ই ডিসেম্বর সাউদিয়া এয়ারলাইন্স করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াই ২৬০ জন যাত্রী নিয়ে বিমানবন্দরে আসে। এর আগের দিন তারা আরো ২৫৯ জন যাত্রী নিয়ে বিমানবন্দরে আসে। আগের ফ্লাইটে শ্রমিকেরা এসেছিল বলে জানা গেছে। সনদ ছাড়াই যাত্রী নিয়ে আসার কারণে ওই এয়ারলাইন্সকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সনদ ছাড়া গত ৫ই ডিসেম্বর ৩০৪ জন, ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫ জন, ৭ই ডিসেম্বর ২৩৫ জন, ৮ই ডিসেম্বর ৮০ জন, ৯ই ডিসেম্বর ৪৮ জন, ১০ই ডিসেম্বর ১১৮ জন, ১১ই ডিসেম্বর ৩০ জন, ১২ই ডিসেম্বর ২৩ জন, ১৩ই ডিসেম্বর ৪ জন, ১৪ই ডিসেম্বর ৩ জন, ১৫ই ডিসেম্বর ৬ জন, ১৬ই ডিসেম্বর ৪ জন যাত্রী বিদেশ থেকে এসেছেন। সর্বশেষ ১৯শে ডিসেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে আসা একটি ফ্লাইটে ৪১৭ জন যাত্রীর মধ্যে ১০ জনের করোনা সনদ ছিল না। ১৮ই ডিসেম্বর অন্য একটি ফ্লাইটে ৬ যাত্রী করোনা সনদ ছাড়া দেশে আসেন। এ ছাড়া এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইটে করে একজন করোনা আক্রান্ত রোগীও এসেছেন বলে বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে। ওদিকে বৃটেনে নতুন ধরনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় দেশটির সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ৪০টির বেশি দেশ। বাংলাদেশ এখনো বৃটেনের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করেনি। গতকাল বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতি জটিল হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখন থেকে বৃটেন থেকে আসা যাত্রীদের সাত দিনের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।