গাজীপুর: গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা হানাদার মুক্ত হয় ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর। ৪৯ বছরেও পালিত হয়নি শ্রীপুর মুক্ত দিবস। এর মধ্যে একটি বড় সময় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির সরকার দেশ পরিচালনা করলেও দলীয় কোন্দলের কারণে পালিত হয়নি শ্রীপুর হানাদার মুক্ত দিবসটি।
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর শ্রীপুর হানাদার মুক্ত হওয়ার সংগ্রামে যারা অংশ গ্রহন করেছেন তাদের মধ্যে জীবিত সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ ফকির এমনটিই দাবী করেছেন। যে ১২ ডিসেম্বর শ্রীপুর উপজেলা তারা মুক্ত করেছেন হানাদার বাহিনীর হাত থেকে, সেই দিনটি পালিত না হওয়ায় দুঃখ এই মুক্তিযোদ্ধার।
৭৫ বছর বয়সের এই যোদ্ধা ৪৯ বছর ধরে অপেক্ষা করলেও দিবসটি পালিত হয়নি। ১২ ডিসেম্বর সরকারীভাবে পালিত না হওয়ায় এখন ভোরের আলো ফুটার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সকলের হাতে জাতীয় পতাকা দিয়ে পারিবারিকভাবেই ১২ ডিসেম্বর শ্রীপুর হানাদার মুক্ত দিবস পালন করছেন এই সংগঠক।
এই প্রতিবেদকের মুখোমুখি হয়ে তিনি আবেগে কেঁদে ফেলেন। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন ১২ ডিসেম্বর শ্রীপুর হানাদার মুক্ত হওয়ার ইতিহাস।
গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলী সদস্য, শ্রীপুর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি ও গোসিংগা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নূর মোহাম্মদ ফকির। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের ব্যাগ হিসেবে পরিচিত এই মুক্তিযোদ্ধা।
১২ ডিসেম্বর শ্রীপুর হানাদার মুক্ত হওয়ার ইতিহাস সম্পর্কে তিনি বলেন, শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ব্রীজে যে যুদ্ধ হয়, তাতে অংশগ্রহনকারীরা হলেন প্রথম প্ল্যাটুন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক প্রধান, দ্বিতীয় প্ল্যাটুন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন, প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই বেপারী, প্ল্যাটুন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জেড আই সুবেদ আলী এবং সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি(নূর মোহাম্মদ ফকির)।
১২ ডিসেম্বর শ্রীপুর হানাদার মুক্ত হলেও কোন বছরেও শ্রীপুর মুক্ত দিবস সরকারীভাবে পালিত হয় না। সারাদেশে স্থানীভাবে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হলেও শ্রীপুরে ৪৯ বছরে তা সম্ভব হয়নি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ ছাড়া যে সকল সরকার ছিল তারা আদর্শিক কারণে দিবসটিকে গুরুত্ব দেয়নি। আর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও দিবসটি পালিত হচ্ছে না। কারণ দলীয় কোন্দল।
তিনি বলেন, বর্তমান সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজের সঙ্গে প্রয়াত সাংসদ এডভোকেট রহমত আলী সাহেবের একটি বিরোধ ছিল। ২০০৯ সালে ইকবাল হোসেন সবুজ যখন শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হন, তখন সাংসদ ছিলেন রহমত আলী সাহেব। বর্তমানে রহমত আলী সাহেব নেই কিন্তু নেতৃত্বে রয়েছেন তার পরিবার। ইকবাল হোসেন সবুজ সাহেব ও রহমত আলী সাহেবের পরিবারের মধ্যে অমিল থাকায় দিবসটি স্বীকৃতি পাচ্ছে না।
তিনি দাবী করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর চলছে। জানিনা, শ্রীপুর মুক্ত দিবস পালনের সরকারী আয়োজন দেখে যেতে পারব কি না। বর্তমানে তিনি ১২ ডিসেম্বর এলেই ভোরের আলোতে পরবিারের লোকজনের হাতে জাতীয় পতাকা দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে সালাম জানিয়ে দিবসটি স্বরণে রাখছেন। এসময় ১২ ডিসেম্বরের স্মৃতি মনে পড়ায় হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন তিনি।