আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের ওপর হামলার ধৃষ্টতা যারা দেখিয়েছে, তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত উপযুক্ত প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ধোলাইপাড়ে নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের কাজ চলবে। ভাস্কর্য হবেই। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্মাণাধীন ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ চলবে। আমরা ভাস্কর্য নির্মাণ করবো। তারা যে প্রস্তাব দিয়েছে এটা তাদের বিষয়।
ভাস্কর্য বিভিন্ন দেশে হয়েছে, সেখানে কেউ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেনি। হয়তো বৈধ একটি সংস্থা থেকে অনুমতি নিতে হয় সেটা এক বিষয়। আর আনুষ্ঠানিকভাবে ভাস্কর্য আমরা উদ্বোধন করিনি। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে তা অবশ্যই সংবিধান এবং রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। কারণ বঙ্গবন্ধু তো আমাদের জাতির পিতা। দেশে দেশে যেখানে সৌদি আরব, কাতার, মিশর, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তানেও ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্য মুসলিম দেশগুলোতেও আছে। তিনি বলেন, সেদেশের মানুষ তো সেখানকার ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলে না। আর মূর্তি হলো দেবতার পূজা একটা, আর এখানে ভাস্কর্য তো মানুষের ভাস্কর্য। দেবতাকে তো পূজা করা হয়, কিন্তু এখানে তো মানুষকে পূজা করা হচ্ছে না। কাজেই এটাকে তারা কেন এভাবে নিচ্ছে। কুষ্টিয়ায় তারা যেটি করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও মধুদা’র ভাস্কর্যের ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা যারাই করবে এবং যারা এমন ধৃষ্টতা দেখাবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ধর্ম খুব স্পর্শকাতর। তাই হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে উস্কানিমূলক কিছু করে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হোক, আমরা তা চাই না। রাজনৈতিকভাবে সংকটের সমাধান করতে চায় সরকার। বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় একটি নন-পলিটিক্যাল সংগঠন মামলা করেছে। এ বিষয়টি আপনারা কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নয়। তাই অরাজনৈতিক কোনো সংগঠনের মামলা করাটা ইতিবাচক। হুকুমের আসামি হিসেবে নয়, উপযুক্ত প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা সরকারে আছি। হুট করে মাথা গরম করে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিজেই দেখছেন। আমরা ভেবে চিন্তে যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই। ওবায়দুল কাদের বলেন, কেউ হুকুম দিয়েছে এমন কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা সরকারে আছি, ক্ষমতায় আছি। আমাদের ঠাণ্ডা মাথায় এগুতে হবে। কথায় কথায় মাথা গরম করলে চলবে না। বুঝে শুনে আমাদের পরিস্থিতিটা মোকাবিলা করতে হবে। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে অহেতুক দেশে অশান্তি-বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা যুক্তি দিয়ে বলতে চাই।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সাক্ষাৎ দেবেন কি-না সেটি আমি জানি না। আলোচনার সুযোগ আছে কিনা সেটাও প্রধানমন্ত্রী দেখছেন। সব বিষয়েই সরকার প্রধান যদি মনে করেন তাহলে হতে পারে। তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই। মন্ত্রী বলেন, শাপলা চত্বরে হেফাজতের ব্যানারে একটা আন্দোলন হয়েছিল। সেটা তো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মুসলিম দেশগুলোতে মাঝে মধ্যে এ ধরনের ধর্মীয় ইস্যু চলে আসে, এর পেছনে রাজনৈতিক কারণও আছে। আমরা এগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। এখন তো বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ করছে। কিছু কিছু বিষয় আমাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা উচিত। হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের কওমি মাদ্রাসার ১৪ লাখ স্টুডেন্ট আছে। তারা মেইনস্ট্রিম থেকে দূরে আছে। তাদের আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মেইনস্ট্রিমে আনার জন্য দাবিটাকে ন্যায়সঙ্গত মনে হয়েছে। সে জন্য তাদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেছি। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয় যে, তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা করবো। এই ঘটনার পেছনে বিএনপি-জামায়াতের উস্কানি আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের উস্কানি আছে কিনা সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি।