ঢাকা: বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বিশেষ করে ইউরোপে। এসব দেশে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। শীত আসায় বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় বিদেশফেরত যাত্রীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে দেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া কাউকে দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। যারা সনদ নিয়ে আসছেন না তাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। গত একদিনে করোনা সনদ নিয়ে আসেননি এমন ৩০৪ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
৫ই ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ৬ই ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা এসব যাত্রীকে ঢাকার দিয়াবাড়ির দু’টি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টারে রাখা হয়েছে। এর আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) নির্দেশনা দিয়েছিল কোনো এয়ারলাইন্সই করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী বহন করতে পারবে না। এই নির্দেশনার পরও বিভিন্ন এয়ারলাইন্স করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াও যাত্রী বহন করেছে। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ৫ই ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ৬ই ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ২৪ ঘণ্টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের অন্তত ২০টি ফ্লাইট এসেছে। এসব ফ্লাইটে তিন হাজারের বেশি যাত্রী দেশে ফিরেছেন। এসব যাত্রীর মধ্যে ৩০৪ জনের করোনা নেগেটিভ সনদ ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ফ্লাইটের অধিকাংশ যাত্রীই করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে ফিরছেন। বেবিচকের নির্দেশনার পর যারা নেগেটিভ সনদ সঙ্গে রাখছেন না তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার আরটি-পিসিআর প্রতিবেদন দেখাতে না পারায় ৩০৪ যাত্রীকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়। আগে থেকেই নির্দেশনা দেয়া ছিল অথচ তাদের সঙ্গে করোনা সনদ ছিল না। তাই তাদের ১৪ দিন বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকতে হবে। যাত্রী নিজে পজেটিভ না হলেও একই কক্ষে অবস্থানকারী একজনের পজেটিভ হলে তাকেও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
অ্যান্টিজেন পরীক্ষায়ও ধরা পড়ছে করোনা, দ্রুত সারা দেশে চালুর পরামর্শ: দেশে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায়ও ধরা পড়ছে করোনা। ১০ থেকে ১৫ মিনিটে এই পরীক্ষা করা যায়। আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় বেশি সময় লাগে করোনা পরীক্ষার ফল পেতে। প্রথমে দেশের ১০টি জেলায় এই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এই টেস্ট সারা দেশে চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন। অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য সরকার এখনো কোনো ফিস নির্ধারণ করেনি। বিনামূল্যে এই পরীক্ষা করাচ্ছে সরকার। সন্দেহভাজন করোনা রোগী, যাদের উপসর্গ রয়েছে, শুধু তাদেরই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করানো হচ্ছে। বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনরা জানান, এই পরীক্ষায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ করোনা রোগী দ্রুত শনাক্ত হচ্ছেন। যে পরীক্ষাগুলো নেগেটিভ আসছে সেগুলো আবার আরটি-পিসিআর টেস্টের ল্যাবগুলোতে পাঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলার সিভিল সার্জন ডা. এম আখতারুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাচ্ছেন। এতে প্রথম দিন ১২টি পরীক্ষা করানো হয়। তাতে একজন পজেটিভ বা করোনা রোগী শনাক্ত হন। বাকি ১১টি নেগেটিভ ফল আসে। গতকালও ২২টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৫ জন পজেটিভ হয়েছেন। বাকি ১৭টি নেগেটিভ এসেছে। নেগেটিভ যেগুলো এসেছে সেগুলো রংপুর আরটি-পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল জানতে ৩ থেকে ৭ দিন সময় লাগতে পারে। তিনি আরো জানান, এই টেস্টের মাধ্যমে গড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শনাক্ত হচ্ছেন।
পঞ্চগড় জেলার সিভিল সার্জন ডা. ফজলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ৫ই নভেম্বর তার জেলায় ৩টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের পজেটিভ পাওয়া গেছে। গতকাল ৭টি পরীক্ষা করে সবগুলোই নেগেটিভ এসেছে। যেগুলো নেগেটিভ এসেছে সেগুলো দিনাজপুর পিসিআর পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। জয়পুরহাট জেলার সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ আলী বলেন, জেলায় প্রথম দিন ৫০টি পরীক্ষা করে ৫ জনের পজেটিভ এসেছে।
সরকার গঠিত নমুনা পরীক্ষা সমপ্রসারণ নীতিমালা কমিটির প্রধান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী মানবজমিনকে বলেন, কমিটি অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর জোরালো সুপারিশ করেছিল। খণ্ডিতভাবে শুধু অ্যান্টিজেন না, একসঙ্গে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা প্রয়োজন ছিল। শুধু ১০ জেলা নয়, এই টেস্ট দ্রুত সারা দেশে চালু করতে হবে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আরটি-পিসিআর টেস্ট যেখানে আছে অ্যান্টিজেন টেস্টও সেখানে থাকতে হবে। তিনি বলেন, টেস্টে ২৫ শতাংশ ফল নেগেটিভ আসতে পারে। তাই আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে। আর সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় এই পরীক্ষা বেসরকারিতেও থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
করোনায় আরো ৩১ জনের মৃত্যু
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ হাজার ৮৩৮ জনে। নতুন শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৬৬ জন। মোট শনাক্ত ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে আরো জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩১৫টি, অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩ হাজার ২১৮টি। এ পর্যন্ত ২৮ লাখ ৬৩ হাজার ১৬৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৫৫২ জন এবং এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮২ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী। এ পর্যন্ত পুরুষ ৫ হাজার ২৩১ জন এবং নারী মারা গেছেন ১ হাজার ৬০৭ জন। মারা যাওয়াদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের উপরে ২১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ জন, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে ১ জন করে এবং বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন করে রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩০ জন এবং বাসায় মারা গেছেন ১ জন।