হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের ৬৫টি সংগঠন। মঙ্গলবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে সংগঠনগুলো একযোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে এ দাবি জানিয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে নগরীর মৎস ভবন থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাট পর্যন্ত এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘আমরা মনে করি, ভাস্কর্যের সাথে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। কাজেই যারা বাংলাদেশে ভাস্কর্যের সঙ্গে ধর্মের সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি করছে, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করার সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপগোষ্ঠীগুলোর যে ধৃষ্টতা দেখছি, তা একদিনে তৈরি হয়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম বলেন, অবিলম্বে সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল করে বাহাত্তরের অসাম্প্রদায়িক সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। মৌলবাদের জুজুর ভয়ে রাষ্ট্রের প্রশ্রয়-আপসের অবসান ঘটাতে হবে।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এখন প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু্। তিনি বলেন, জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙে নদীতে ছুঁড়ে ফেলার মতো বক্তব্য দেওয়ার ধৃষ্টতা তারা দেখিয়েছে। তারা কারা ? তারা হচ্ছে একাত্তরের পরাজিত সৈনিক, একাত্তরের পরাজিত শত্রু, তাদেরই উত্তরসূরি, একেবারেই তাদের প্রতীকী রূপ।
মানববন্ধনে যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাংবাদিক আবেদ খান, ইতিহাসের অধ্যাপক, গবেষক মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তসহ আরও অনেকে কর্মসূচিতে যোগ দেন।
কর্মসূচির মূল দাবি অবিলম্বে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেফতার এবং জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
অংশ নেয়া সংগঠন
আজকের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে আছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টরস কমান্ডারস ফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশন, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, প্রজন্ম ’৭১, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ইতিহাস সম্মিলনী, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ), জাতীয় যুব জোট, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্র, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ, ’৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ), বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম, গৌরব ’৭১, অপরাজেয় বাংলা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগার, কর্মজীবী নারী, জাতীয় নারী জোট, নারী মুক্তি সংসদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ (বাংলাদেশ চ্যাপটার), জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা, সেক্যুলার ইউনিটি বাংলাদেশ, ইয়ুথ ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঘাসফুল শিশু কিশোর সংগঠন, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।