দেশে করোনা সংক্রমণ ক্রমেই ভয়ঙ্কার রূপ নিচ্ছে। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাতে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার ৫২৪ জন।
দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৮ মার্চ। শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ৪ নভেম্বর তা ছয় হাজার ছাড়িয়েছিল। গতকাল তা সাড়ে ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন সর্বাধিক ৬৪ জনের মৃত্যু হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় আরো দুই হাজার ২৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফলে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৫৬ হাজার ৪৩৮ জনে। একই সময়ে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই হাজার ২৭৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৫৩ জন।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর আরো জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ এবং ১২ জন নারী। এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার সাতজন পুরুষ এবং এক হাজার ৫১৭ জন নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব বয়সী ২৫ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে আটজন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে একজন এবং ১১-২০ বছরের মধ্যে একজন মারা গেছেন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ২৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে তিনজন, রাজশাহীতে তিনজন এবং রংপুরে দুইজন মারা গেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল যারা মারা গেছেন, তারা সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন।
রাজশাহী বিভাগে ৯৪ জন আক্রান্ত
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গত বুধবার বিভাগে নতুন ৯৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ দিন বিভাগে সুস্থ হয়েছেন ৪৪ জন। বিভাগে এখন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ২২ হাজার ৩৭২ জন। এদের মধ্যে মোট ২০ হাজার ৫৭১ জন সুস্থ হয়েছেন। এ দিন বিভাগের বগুড়া জেলায় তাদের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে বিভাগের আটটি জেলায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মোট ৩৩৮ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বিভাগে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজশাহীতে। এর বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ জন, নওগাঁয় ২৪ জন, নাটোরে ১২ জন, জয়পুরহাটে সাতজন, সিরাজগঞ্জে ১৪ জন এবং পাবনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বগুড়ায় আরো তিনজনের মৃত্যু
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় করোনায় মৃত্যুর মিছিল আবারো দীর্ঘ হচ্ছে। নতুন করে বুধবার আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি হিসাবে জেলায় করোনায় মারা গেছেন ২০৬ জন। তারা হলেন বগুড়া সদরের বাসিন্দা মতিউর রহমান (৬৫), শামছুল আলম (৬০) ও সুলতানা পারভীন (৬৭)। এর মধ্যে মতিউর রহমান শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও অপর দু’জন টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এসব তথ্য জানিয়ে জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানায়, বুধবার জেলার দু’টি পিসিআির ল্যাবে ১৯৮টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরো ৩৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বগুড়া সদরে ২৮ জন। একই দিন সুস্থ হয়েছেন ১৮ জন এবং বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫৪৯ জন।
চট্টগ্রামে ২২৩ জনের করোনা শনাক্ত
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৪ হাজার ৩৯৮ জন। এই দিন চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু হয়েছে একজনের। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৫৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ২২৩ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে মহানগরীতে ১৮৬ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ৩৭ জন রয়েছেন।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৪৬ জন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে ৮৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৪ জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৯২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪ জন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ২৭৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৭১ জন, বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে ৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৪ জন, শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ২৭টি নমুনা পরীক্ষা করে একজন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এর বাইরে চট্টগ্রামে জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে (আরটিআরএল) ১৩টি নমুনা পরীক্ষায় সাতজনের করোনা পজেটিভ আসে।
করোনার টিকা সবাই পাবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সবাইকে যাতে করোনার টিকা দেয়া যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন যখন অ্যাভেইলেবল হবে, তখন আমরা যার যেখানে প্রয়োজন সেখানে দিতে পারব। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স উদ্বোধন করে তিনি বলেন, টিকা যাতে সবাইকে দেয়া যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে ভ্যাকসিন এলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও পাবে। প্রথমে ৩ শতাংশ দেবে, পরে তাদের কাছেও (ডব্লিউএইচও) ভ্যাকসিন আসবে তখন বাকি ১৭ শতাংশ বিভিন্ন দেশকে দিতে থাকবে। আমরাও সেখান থেকে পেতে থাকব।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে বলেই কোভিড সংক্রমণ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে। আমাদের কোনো কাজ থেমে নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: এ বি এম খুরশীদ আলম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা: ইকবাল আর্সলান, জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা: ফারুক আহমেদসহ চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।