ঢাকা: শীত আসতে না আসতেই বেড়েছে করোনার প্রকোপ। বেড়েছে শনাক্ত রোগী ও মৃত্যু। সরকারি হিসাবে যে তথ্য দেয়া হচ্ছে বেসরকারি হিসাবে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে ভুগছেন এমন রোগী এখন ঘরে ঘরে। জ্বর, সর্দিকাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতাসহ নানা উপসর্গে ভুগলেও করোনার পরীক্ষা করাচ্ছেন না অনেকে। সাধারণ রোগের মতো ওষুধ সেবন করে সুস্থ হয়ে উঠছেন। যাদের অবস্থা বেশি গুরুতর হয় তারাই কেবল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষা না করে থাকায় অনেকে অজান্তেই করোনা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।
এতে আশপাশের মানুষের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। অবস্থা এভাবে চললে শীতে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তারা বলছেন, পরীক্ষা বাড়াতে হবে। যাদের উপসর্গ আছে শুরুতেই তাদের করোনা টেস্ট করে নিতে হবে। এতে নিজে সুরক্ষিত থাকা যাবে একই সঙ্গে অন্যকেও নিরাপদে রাখা যাবে। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর আগে গত ৫ই সেপ্টেম্বর সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। মাঝে সংক্রমণ শনাক্তের হার ১০ থেকে ১৩ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। ওদিকে সংক্রমণ বাড়ার তথ্য পাওয়া যায় এ সংক্রান্ত ফোন কলের তথ্যেও।
ফোনকল বেড়েছে: করোনায় হঠাৎ বেড়েছে টেলিমেডিসিন সেবায় ফোনকল! হটলাইনে গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআর, জাতীয় কলসেন্টার ৩৩৩ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগে করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সেবা পেতে মোট ২,৬১২ ফোন কল এসেছে। যেটা গত এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত সর্বমোট করোনা সংক্রান্ত তথ্য পেতে মোট ফোনকল এসেছে ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫টি। এমআইএস বিভাগের হটলাইনে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক বলেন, দেশের যেকোনো প্রান্তে বসে রোগীদের চিকিৎসকগণ বিনামূল্যে প্রতি কর্ম দিবসে এই হটলাইনে করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে সেবা দিয়ে থাকে। সংকটকালীন বর্তমান পরিস্থিতিতে মাত্র একটি ফোনকলেই মিলছে জরুরি এ স্বাস্থ্য সেবা। এদিকে বলা হয়ে থাকে জাতীয় কলসেন্টার ৩৩৩ এ কল করে যে কেউ যেকোনো সময় নিতে পারবেন এই স্বাস্থ্যসেবাটি। কিন্তু ৩৩৩ হটলাইনে সেবা পাওয়ার সুযোগ খুবই কম বলে অভিযোগ রয়েছে সেবা গ্রহীতাদের। চলতি বছরের ৮ই মার্চ দেশে প্রথম তিনজন নোভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন।
এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ফোনকলের সংখ্যা। আইইডিসিআর সূত্র জানায়, শুরুতে চারটি হটলাইন নম্বর চালু ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত এবং মৃত্যু হার বাড়ায় পরবর্তীতে ১৯টি, সর্বশেষ ২৫টি পর্যন্ত হটলাইন বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এখন একটি মাত্র নির্দিষ্ট হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে সবাই করোনা সংক্রান্ত সেবা পেয়ে থাকে। আইইডিসিআর সূত্র জানায়, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়াতে ফোনকলের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। অফিসিয়ালি ১০৬৫৫ নম্বর দিয়ে অনেক মানুষ একত্রে এখানে সেবা নিতে পারেন। আইইডিসিআরের হটলাইন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি যুক্ত হয়েছে ইতিমধ্যে। সর্বশেষ ২৫টি হটলাইন সেবা চালু করলেও চাহিদার ওপর নির্ভর করে এর সংখ্যা বাড়ানো কমানো হয়।
এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ও করোনার জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, সম্প্রতি মানুষের মধ্যে একটু উদ্বেগ বেড়েছে। সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যাটাও বেশি চলতি সপ্তাহে। বর্তমানে আইইডিসিআরের একটি হটলাইনে অনেকে ফোন দিয়ে কথা বলে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন। হটলাইনে ফোনকল বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনার প্রথম ঢেউ শেষ না হলে দ্বিতীয় ঢেউ যে হবে না বিষয়টি তা নয়। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হতে গেলে সর্বনিম্ন যে হার ছিল তার চেয়ে দেড়গুণ বেশি হতে হবে দুই সপ্তাহ শেষে। ইতিমধ্যে প্রথম সপ্তাহ চলে গেছে। দ্বিতীয় সপ্তাহেও যদি বাড়তে থাকে এবং তৃতীয় সপ্তাহে দেড়গুণের জায়গায় পৌঁছায় এবং সেটা যদি চার সপ্তাহ টানা থাকে তাহলে বলবো যে, সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়ে গেছে।