সিলেট: সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। টানা ৩ ঘণ্টার অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই উপকেন্দ্রটির। এই কেন্দ্র থেকে সিলেট বিভাগের ৮০ ভাগ এলাকায় গতকাল দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে সিলেট। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে গতকাল দুপুর থেকে দুর্ভোগ শুরু হয়। পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এদিকে কবে নাগাদ সিলেটে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে বলে তারা জানিয়েছে।
সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্র্রটি ১৩২/৩৩ উপকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এই উপকেন্দ্র থেকে সিলেট বিভাগের চার জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করে গ্রিড উপকেন্দ্রে শব্দ হয়। এর পরপরই বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ট্রান্সফরমারে আগুন দেখা যায়। তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা নিজেদের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এরপরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে থাকে। পরপর দু’টি ট্রান্সফরমারে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এতে করে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে এই আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় আশেপাশের লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যান। খবর পেয়ে সিলেট ফায়ার ব্রিগেডের ৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। বেলা দেড়টার দিকে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। এর আগে অগ্নিকাণ্ডে গ্রিড উপকেন্দ্রের সিংহভাগ এলাকা পুড়ে যায়।
সিলেট ফায়ার সার্ভিসের উপ- সহকারী পরিচালক শওকত আহমদ জানিয়েছেন, সিলেট ফায়ার ব্রিগেডের ৭টি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আগুনে গ্রিড উপকেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি নিরূপণে বিদ্যুতের কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে গ্রিড উপকেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের কুমারগাঁওয়ের এই গ্রিড উপকেন্দ্রটি সংরক্ষিত এলাকা। ফলে ভেতরে সবার অবাধ যাতায়াত নেই। যান্ত্রিক কোনো ত্রুটির কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনে ২৫/৪১ এমবিএ, মেগাবল্ট দু’টি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। একটি ট্রান্সফরমারের মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। দু’টি ট্রান্সফরমার আর কোনো কাজ করবে না। সবক’টি সার্কিট ব্রেকার ও ৩৩ কেভি বারের কয়েকটি অংশ পুড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা- অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোকাম্মেল হোসেন জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ কবে স্বাভাবিক হবে সেটি এখনই বলা মুশকিল। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। এরপরই জানা যাবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যুতের উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত সেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। সিলেটের এই গ্রিড লাইন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছেন না। এর মধ্যে সিলেটের জৈন্তাপুর, কুলাউড়া ও মৌলভীবাজারের একাংশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। কুমারগাঁও এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রাজা জানিয়েছেন- অগ্নিকাণ্ডের সময় বিকট শব্দে এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। এরপর আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়লে আশেপাশের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যান। এ সময় অনেকেই তাদের আসবাবপত্রও সরাতে শুরু করেন। বিপুল সংখ্যক লোকজনের উপস্থিতি থাকায় মোতায়েন করা হয় পুলিশও।
সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি মাইকিং করে মানুষকে জানানো হচ্ছে। সিলেট নগরীর সব জায়গায় ইতিমধ্যে মাইকিং শুরু করা হয়েছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।