সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির পলাতক ইনচার্জ এসআই (বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঞাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী ডোনা এলাকা থেকে তাকে জেলা পুলিশের একটি দল গ্রেপ্তারের পর জানানো হয়, সীমান্ত এলাকায় এতোদিন ঘাপটি মেরে ছিলেন তিনি।
থানার ভেতর পুলিশি নির্যাতনের কারণে রায়হান নামের এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান আসামি হলেন আকবর হোসেন। সম্প্রতি এই ঘটনা দেশজুড়ে বিরাট আলোচনার সূত্রপাত ঘটায়।
এনিয়ে সিলেটে বিক্ষোভ ও আন্দোলনও হয়েছে। এক পর্যায়ে এইসআই আকবরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আলটিমেটাম দেয়া রায়হানের পরিবার, আলটিমেটাম শেষ হবার পর তারা অনশনও পালন করে। অবশেষে আটাশ দিন পর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
পুলিশ বলছে, হোসেন এতদিন পলাতক ছিলেন। তিনি ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরই এক পর্যায়ে সীমান্তে অঞ্চল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিলেটের পুলিশের এসপি নুরুল ইসলাম বিবিসিকে জানান, সোমবার বেলা ১২টার দিকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি বলেন, আগে থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের সাথে সীমান্তবর্তী কানাইঘাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ইসলাম বলেন, ‘সম্ভবত ওই এলাকায় হাইবারনেশনে (ঘাপটি মেরে থাকা) ছিল আকবর হোসেন।’ রোববারই তাকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে।
রায়হান হত্যার অভিযোগ ওঠার শুরুর দিকেই পুলিশের তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আকবরসহ ৭ জনকে বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা হয়।
কী ঘটেছিল রায়হানের সাথে?
গত ১০ই অক্টোবর সিলেটের কাষ্টঘর এলাকা থেকে রায়হান আহমেদকে আটক করে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর ভোররাতের দিকে অপরিচিত নম্বর থেকে রায়হান তার মামাতো ভাইকে ফোন করে টাকা নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আসতে বলেন।
সকালে রায়হানের বাবা ফাঁড়িতে গেলে সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে যেতে বলা হয়। হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তিনি।
ওই রাতেই নিহতের স্ত্রী পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এরপর থেকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন শুরু করে সাধারণ মানুষ।
১৫ দিনের মধ্যেও আইনের মানুষেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কেন গ্রেফতার করতে পারছে না। এবং প্রধান অভিযুক্ত আকবর হোসেন জবানবন্দি দেয়ার একদিন পর কীভাবে পালিয়ে গেল সেটা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
ওই ঘটনার পর একদফা ময়নাতদন্ত শেষে রায়হানকে কবর দিয়ে দেয়া হলেও পরে কবর থেকে তুলে লাশ দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যাওয়ার কথা জানায় মামলার তদন্তকারী সংস্থা।
যদিও, রায়হান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ শুরুতে দাবি করেছিল যে ছিনতাইয়ের অভিযোগে এলাকাবাসী তাকে গণপিটুনি দিয়ে আহত করেছে। পরে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।
কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে কোনো গণপিটুনির আলামত পাওয়া না যাওয়ায় ঘটনার মোড় ঘুরে যায়।
সূত্র : বিবিসি