বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সুবর্ণজয়ন্তী আগামী বছর যৌথভাবে উদ্যাপন করবে ঢাকা ও নয়াদিল্লি। তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে আসন্ন ২৬শে মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যাপিত হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, ২৬শে মার্চের ঢাকার আয়োজনে অংশ নিতে এরইমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মোদি বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং নীতিগতভাবে সফরের সম্মতি দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, সামনের বছর ১৭ ও ২৬শে মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি দিন রয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে চাই। এটি আমাদের বিজয়, ভারতেরও বিজয়। আমরা এটি একসঙ্গে উদ্যাপন করবো।
ওই দিনে শুধু বাংলাদেশে অনুষ্ঠান হবে না, অন্য দেশের রাজধানীতেও এটি উদ্যাপিত হবে। ঢাকায় নবনিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মার ওই সাক্ষাৎ-বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়। পরে বৈঠক বিষয়ে মন্ত্রী নিজেই গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। বলেন, ভারতের নয়া দূত বিক্রম এবং তার ঊর্ধ্বতন অনেকের সঙ্গে আমার চেনা-জানা বহুদিনের। আমরা সেই যোগাযোগ মেন্টেইন করি। হাইকমিশনার বিক্রমের মেধা ও প্রজ্ঞার ভূয়সী প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে তার পদায়নে আমি খুশি। তিনি আমার পছন্দের মানুষ, কথা বলে তার প্রজ্ঞার পরিচয় পেয়েছি। মনে হয়েছে তিনি বাংলাদেশের ইস্যুগুলো ভালোভাবে জানেন এবং চর্চা করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর অনেকের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমার সঙ্গে আলাপে সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক জেসিসি’র ফলোআপ নিয়ে কথা হয়েছে। জেসিসিতে ভারতীয় ঋণে বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পগুলোর নির্বিঘ্ন বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেছিলাম। আজকের বৈঠকেও আমরা এ নিয়ে আলোচনা করেছি, যেন আমাদের কোনো বদনাম না হয়। আগামী ১৬ বা ১৭ই ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হতে পারে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বরে বৈঠকটি হবে। তারিখ এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি। ভারতের দিক থেকে ১৬ই ডিসেম্বর বৈঠকের আগ্রহ দেখানো হয়েছে। কিন্তু ওই দিন আমরা যথেষ্ট ব্যস্ত থাকবো, ফলে উভয়ের সুবিধাজনক সময় খোঁজা হচ্ছে। মেহেরপুর টু নদীয়া সড়কটিকে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ নামকরণের প্রস্তাব আগেই করেছিলেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করার বিষয়ে হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল ১৭টি গাড়িতে চড়ে বিদেশি সাংবাদিকসহ অনেকে মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে মেহেরপুরে এসেছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিক সেই সড়ক আজ পরিত্যক্ত প্রায়। আমরা চাই এটি স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে খুলে দিতে। হাইকমিশনার এ বিষয়ে আমার সঙ্গে একমত।
সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করে মোমেন বলেন, এটি কখনো ইস্যু হওয়া উচিত নয়। কিন্তু প্রায়শই হত্যা সংঘটিত হচ্ছে, ইস্যু হয়ে আলোচনায় উঠছে। এটি দুঃখজনক। সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে সর্বশেষ জেসিসি বৈঠকেও কথা হয়েছে। তার আগে বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় ভারতীয় পক্ষ স্পষ্ট অঙ্গীকার করেছে এটি ‘জিরো’তে নামিয়ে আনতে। কিন্তু তা এখনো কার্যকর না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে আজকে আমরাও আলোচনা করেছি। যদিও আমাদের সীমান্ত বাহিনীর প্রধানরা (গত মাসেই) প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, কোনো হত্যাকাণ্ড হবে না, কিন্তু হচ্ছে। সীমান্ত হত্যাকে ‘ছোট বিষয়’ আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিন্তু প্রসঙ্গটি বারবার আসছে। ভারতীয় দূতও এটি স্বীকার করেছেন। তবে এতে ‘দুই পক্ষেরই ঝামেলা আছে’ বলে মনে করেন তিনি (ভারতীয় দূত)। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক বিরাজমান এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপ বা আলোচনায় ঘনিষ্ঠ দুই প্রতিবেশীর অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটি বিশ্বে অনন্য নজির। বিশেষত, একটি মুসলিম এবং নন-মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে এমন সংলাপ বা আলোচনায় সমস্যার সমাধানের রেকর্ড দুনিয়াতে দ্বিতীয়টি নেই। কিন্তু আমরা এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি খুব একটা পাইনি। ভারতীয় হাইকমিশনারকে বিষয়টি বললাম, তিনিও তা মানলেন। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নির্ধারণের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, এসব ক্ষেত্রে নেতৃত্বের পরিপক্বতা প্রদর্শিত হয়েছে।
এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের বিভিন্ন উদাহরণ উল্লেখ করেন। ভারতের সঙ্গে বিশেষ বিমান পরিসেবা এয়ার বাবল শিগগিরই চালু হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি চালু হলে পররাষ্ট্র সচিব নয়াদিল্লি যাবেন। তবে আমার বক্তব্য হলো, বাস ও ট্রেনে মানুষের যাতায়াত চালু করা। কারণ আমাদের অধিকাংশ লোক গাড়িতে এবং রেলে যাতায়াত করে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভারত ওই বাস ও রেল যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা কোভিড নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। ভারতের আকার বা বিশালত্বের বিষয়টি স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের বিরাট প্রতিবেশী। তারা আমাদের পাত্তা না দিলেও পারতো। কিন্তু দেশটির সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক, তারা আমাদের উপকারী বন্ধু। ভ্যাকসিন নিয়ে হাইকমিশনারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।