শুভ জন্মদিন গল্প আব্বু! ♥♥♥ পাঁচ বছর পূর্ণ ক’রে ছয় বছরে পা রাখলে তুমি। এবারের জন্মদিনটি তোমাকে কাটাতে হচ্ছে বেদনাবিধুর ও বিষাদগ্রস্হ পরিবেশে। তার বড় কারণ আগস্টেই তোমার আম্মু ও আমার নানী, তোমার বড় আম্মুকে হারিয়েছো। অথচ দেখো, তোমার দুটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এবং জন্মদিনের প্রারম্ভে এই মানুষটি গোলাপ ও চুমু দিয়ে তোমাকে আশির্বাদ করেছেন। ভালোবাসার স্মৃতিচিহ্ন রেখে গেছেন। পাশের ছবিটি তো তোমার প্রথম জন্মদিনের অনুষ্ঠানের। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে তুমি তোমার বড় আম্মুর মাথায় হাত রাখার চেষ্টা করছো। আমরা যেমন তোমাকে আবরার গল্প বা গল্প ব’লে ডাকি, তিনি তোমাকে এ নামে ডাকতেন না। তোমাকে ডাকতেন তাঁর দেওয়া ‘অর্ক’ নামে। এবং তোমাকে শ্বশুর আব্বা ব’লে ডাকতেন। তোমাকে ও আমাকে তিনি কখনোই ভুলতেন না। নব্বই ছুঁই ছুঁই মানুষটি শেষ দিকে বিছানায় কিছুকাল অসুস্থ থাকা পর্বেও ফোন ও ভিডিও কলে কথা ব’লেছেন। বারবার দেখতে চেয়েছেন। আমরা তাঁর প্রতি সুবিচার করতে পারিনি। যন্ত্রচালিত জীবন যাবো যাবো করেও যেতে দেয়নি। তারপর তিনি হাজারো স্মৃতি আমাদের উপহার দিয়ে ঋণী ক’রে রেখে ঘুমিয়ে গেলেন রাজশাহী মোল্লাপাড়া ঈদগাহ গোরস্থানে। এক দুপুরে। তারপর বেদনায় তোমার মা ও নানু নীলকন্ঠ পাখি হয়ে গেলেন। আমরাও।
মনে পড়ছে, তোমার বড় আম্মুকে শেষ বিদায় দিয়ে যখন তোমার নানু বাড়ি ফিরেছি। দেখলাম গাজীপুর থেকে রাজশাহী দীর্ঘ প্রাইভেট কার জার্নিতে ক্লান্ত শ্রান্ত তুমি গোসল সেরেই ক্ষুধায় নোডলস নিয়ে খাটে আসন পেতে বসেছো। তোমার ফর্সা মুখ মেঘে ঢাকা৷ আমাকে দেখেই ক্ষুধায় নুডলস মুখে দিতে দিতে বললে: বড় আম্মুকে কবর দিয়ে এসেছো, তাই না?
তোমার থেকে এ কথা শুনে আমি থ মেরে গেলাম। বেদনাপানে চেয়ে তোমার নক্ষত্রমুখে তাকালাম। সে মুহূর্তে তোমার মুখের প্রতিটি রেখা আমার কাছে এতোই স্পষ্ট ছিলো যে তা এই জীবনে কোনোদিন ভুলবো না। পাঁচ বছরের শিশুটি তুমি, অথচ তোমাকে তখন খুব পরিনত মনে হচ্ছিলো।
তোমার সৌভাগ্য নানাবাড়ির বিপুল আদর তুমি পাচ্ছো৷ মাত্র ৭ বছর বয়সী তোমার বাবা তার নিজের নানীকে হারিয়ে সৎ নানীর প্রবল দাপটে ও মুখি আর হতেই পারেনি। নানার আদরও ওই অর্থে পায়নি। তুমি ভাগ্যবান তুমি তা পাচ্ছো।
এই সীমাহীন প্রাপ্তির মধুর বিড়ম্বনাও আছে। যেমন, শেষবার কয়েক মাস আগে রাজশাহী থেকে ফেরার সপ্তাহ দুয়েক পর তুমি তোমার মাকে ব’লে বসলে- প্রত্যেক মানুষেন দুটি জীবন থাকে। একটি বড় জীবন। অপরটি ছোট জীবন। আমার বড় জীবনটি শেষ হয়ে গেছে যেদিন তোমরা আমাকে রাজশাহী থেকে এনেছো। এখন গাজীপুরে ছোট্ট জীবনে আছি। বারবার পড়াশোনার তাগাদা দিয়ে এ জীবনটিও বিষিয়ে তুলছো। সারাক্ষণ পড়বো কেন, আড্ডা ঘুরাফেরাও চাই!
এসব শুনে তোমার মা থ হয়ে গেলেন। কী বলবেন মুখে তার কথা জুটছে না!
এক সময় পৃথিবীতে করোনাসংকট এলো। করোনা নিয়ে তোমার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। বারবার আমাদেরকে সতর্ক করছো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগাদা দিচ্ছো। তুমি নিজে একটু পর পর সেনিটাইজার দিয়ে হাত ধুচ্ছো। মানুষের সামান্য উপস্থিতিতে মাস্ক পরে নিরাপদ দূরত্বে চলে যাচ্ছো। একসময় তোমার খেয়াল হলো তুলনামূলক তোমার দাদুভাই নিয়ম মানছেন কম। উপরন্ত চা খেতে কখনো সখনো বাজারে ঢুকছেন। এসব দেখে তুমি দাদুভাইকে একাধিক দিন সতর্ক করেছো। খুব বেশি কাজ না হওয়ায় তোমার দাদুভাইয়ের সামনেই দিদুনকে ডেকে এনে বলে ফেললা: এতো বছরেও লোকটিকে তুমি স্মার্ট বানাতে পারো নি!
তোমার দিদুন-দাদা এ কথা শুনে হাসতে হাসতে খুন। তারপর তোমার দাদাভাইও সতর্ক হলেন। করোনাকেও আমলে নিলেন। এর কৃতিত্ব সম্পূর্ণই আমরা তোমাকে দিলাম।
সেই যে তুমি একেবারেই ছোট্রটি, মুখে সদ্য কথা ফুল হয়ে ফুটতে চাইছে,সম্ভবত দু বছরের তুমি, সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে আমরা যাচ্ছি তোমার নানুবাড়ি-রাজশাহী, তুমি হুট করে ক্যান্টিন বয়কে বলে বসলে: মামা, বাবু চা খাবে, বাবুকে চা দিন! দু বছরের তুমি চা খাবে,সেই প্রথম আমরা জানলাম, কামরায় থাকা লোকজন, টিটি’র পাশাপাশি তোমার মা ও আমি জানলাম।
তারপর এ ক’বছরে কতো শতো সোনালী মুহূর্ত তুমি সৃষ্টি করেছো, উপহার দিয়েছো তোমার সৃজনের আলো। তোমার স্বজনেরা দেখেছে তোমার অভিনব উদ্ভাসনের ঝলক। আর সব কিছুর জন্যই মহান আল্লাহর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, ধন্যবাদ জানাচ্ছি তোমার অনুরাগীদের,হিতাকাংখীদের।
তোমার জন্মদিনে পরম পরওয়ার দিগারের কাছে প্রার্থনা, শুদ্ধতম মানুষ হওয়ার জন্য আমাদের দায়িত্বটা যেন আমরা পালন করে যেতে পারি। এবং মহান স্রষ্টা যেন তার দয়া দিয়ে তোমার চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ করেন। বৈরী সময় জয় করার যোগ্যতা দান করেন। তোমাকে যেন তিনি কর্মবীর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে সাহায্য করেন। দান করেন ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ।
মানুষের জন্য বড় হও, বাবা!
হেপি বার্থ ডে টু ইউ ডিয়ার গল্প!
১৫.১০.২০২০