করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার পাশাপাশি নেয়া হচ্ছে প্রস্তুতিও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখনো করোনা সংক্রমণ প্রথম ধাপেই রয়ে গেছে। সামনে দ্বিতীয় ধাক্কা আসতে পারে। তবে ইতিমধ্যেই সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমে গেছে। সড়কে, গণপরিবহনে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মানুষের মধ্যে করোনার কোনো ভীতি দেখা যাচ্ছে না। এমনকি করোনা রোগী কমছে এমন ধারণা থেকে রাজধানীর কোভিড ডেডিকেটেড কয়েকটি হাসপাতালে এই কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন রাজধানীতে করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা হয়- এমন কয়েকটি হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত কয়েকদিন থেকে রোগী বাড়ছে এসব হাসপাতালে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ১৫৩৭ জন।
গত তিনদিনে ঢাকার ১১টি হাসপাতালের হিসাব বলছে প্রতিদিনই এখন আগের চেয়ে বাড়তি রোগী আসছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ১৯টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৩ হাজার ৫১৯টি সাধারণ শয্যা আছে। এরমধ্যে ১১ই অক্টোবর এই হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি ছিল ১ হাজার ৭৩১ জন। শয্যা খালি ছিল ১ হাজার ৭৮৮টি। ১২ই অক্টোবর রোগী ভর্তি ছিল ১ হাজার ৭৪৩। শয্যা খালি ছিল ১ হাজার ৭৭৬টি। আর গতকাল ১৩ই অক্টোবর পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ১ হাজার ৭৫৬ জন। আর শয্যা খালি ছিল ১ হাজার ৭৬৩টি।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, করোনা ডেডিকেটেড কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ২০০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১১ই অক্টোবর রোগী ভর্তি ছিল ৬৬ জন। শয্যা খালি ছিল ১৩৪টি। ১২ই অক্টোবর রোগী বেড়ে ৭২ জন ভর্তি ছিল। খালি ছিল ১২৮টি শয্যা। গতকাল ১৩ই অক্টোবর রোগী আরো বেড়ে ভর্তি ছিল ৭৭ জন। শয্যা আরো কমে খালি ছিল ১২৩টি। তিনদিনে হাসপাতালটিতে আগের চেয়ে বাড়তি ১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। একইভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩৪টি সাধারণ করোনা শয্যায় ১২ই অক্টোবর রোগী ভর্তি ছিল ১৭৬ জন। শয্যা খালি ছিল ৫৮টি। পরের দিন ১৩ই অক্টোবর ৫ জন রোগী বেশি ভর্তি হয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে শয্যা খালি ছিল ৫৩টি। একইভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত দুইদিনে ২ জন রোগী বেড়েছে। আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে দুইদিনে তিনজন, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে তিনদিনে ৭ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে তিনদিনে চার জন, স্কয়ার হাসপাতালে চারজন, ইবনে সিনা হাসপাতালে দুইদিনে ৬ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনদিনে ১০ জন রোগী বেড়েছে।
এদিকে সারা দেশে করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। ১১ই অক্টোবর ১ হাজার ১৯৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। ১২ই অক্টোবর সেটি বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৭২ জন। আর ১৩ই অক্টোবর সেটি আরো বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫৩৭ জন। ঢাকার ৬৩টি ল্যাবে গত তিনদিনে নমুনা সংগ্রহ বেড়েছে ২ হাজার ৭০৮টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে ১১ই অক্টোবর ঢাকার সবক’টি করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ৬ হাজার ৮৯৭ জনের। পরীক্ষা করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৪৩ জনের। ১২ই অক্টোবর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ হাজার ৫৪২ জনের। পরীক্ষা করা হয়েছে ৯ হাজার ৪০৯ জনের। আর গতকাল ১৩ই অক্টোবর নমুনা সংগ্রহ আরো বেড়েছে। ওইদিন ৯ হাজার ৬০৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পূর্বের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ৯ হাজার ৬৫৩ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, রোগী বাড়া-কমার মধ্যে আছে। তবে এখনই সেটাকে সেকেন্ড ওয়েভ বলা যাবে না। এখন যেটা বাড়তেছে সেটা নরমাল ভেরিয়েশন। তিনি বলেন, সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে প্রস্তুতি আছে। মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রচার-প্রচারণা চলবে। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ এরকম একটা কর্মসূচি আছে। এ ছাড়া মসজিদে খুতবার সময় বা নামাজের পরে একটা আলোচনা হবে। যাতে করে সবাইকে সচেতন করা যায় মাস্ক পরার। এসব বিষয়ে বিভাগীয় ও জেলাতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা যেন প্রস্তুত থাকে।