নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, সিলেটের এম সি কলেজসহ সারাদেশে নারীর শ্লীলতাহানি, নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ। তারই প্রেক্ষিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি (বানাসাস)’র উদ্যোগে মঙ্গলবার মানববন্ধন, কুশপুত্তলিকা দাহ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি (বানাসাস)’র সভাপতি নাসিমা সোমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আনজুমান আরা শিল্পী, বিএফইউজে’র বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ দ্বীপ আজাদ, ডিইউজে’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, বিএফইউজে’র নির্বাহী সদস্য শেখ মামুন, সিনিয়র সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক মানিক লাল ঘোষ, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম জহিরুল ইসলাম, মিডিয়া জার্নালিস্ট ক্লাব অব বাংলাদেশ এর সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম বাদল চৌধুরী, জাতীয় সাংবাদিক সোসাইটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মহাসচিব নাসির উদ্দীন বুলবুল, (বানাসাস)’র অর্থ সম্পাদক ইশরাত ফারহিম, দফতর সম্পাদক ফাতিমা মুন্নি, নির্বাহী সদস্য শান্তা ফারজানা, আকলিমা বেগম লিমা, হালিমা বেগম, সালমা আফরোজ, সিনিয়র সাংবাদিক তাহমিনা, রেহানা আক্তার রেনু, হাফছা আহমেদ মিতু, সিনিয়র সাংবাদিক সমীরণ রায়, সিনিয়র সাংবাদিক ইউসুফ আলী বাচ্চু, সিনিয়র সাংবাদিক মো. হেদায়েত উল্লাহ মানিক প্রমুখ। সংহতি প্রকাশ করেন নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি’র চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদী। সভাপতি নাসিমা সোমা তার বক্তব্যে বলেন, সারাদেশ আজ স্তম্ভিত। এ কেমন বর্ববরতা। জল্লাদের উল্লাস আমাদের বাংলায় এ দল না ওই দল সে প্রশ্নে বা তর্কে না যেয়ে এবার নিজেরা নিজেদের দোষ খুঁজতে হবে। সচেতনতা তৈরি করতে হবে নিজের ঘর থেকেই। তিনি বলেন, নির্যাতনের ভয়ে নারী ঘরবন্দি হলে দেশের সকল খাতে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্যাতন ও ধর্ষণকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। গত এক মাস আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একটি বর্বর-নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। যা আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারলাম। তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কি কাজ? ওই অঞ্চলের প্রশাসন কি করছিলো? আমরা এসব প্রশ্নের জবাব চাই। চাই সব অভিযুক্তদের শাস্তি। অনেককে আবার আইনের আওতায় আনা হলেও নানাভাবে তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এ কারণে দেশে নারী নির্যাতন বেড়ে চলছে।
তিনি আরো বলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে শুরু করে বাংলার প্রতিটি ঘর অনিরাপদ। আমরা মা বোন কন্যাদের নিয়ে শঙ্কিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের অভিভাবক। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। সাধারণ সম্পাদক আনজুমান আরা শিল্পী বলেন, ধর্ষকদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হোক। পাশাপাশি তাদের দৃষ্টান্তমূলক মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে যেন পরবর্তীতে আর কেউ এমন ঘৃণ্য অপরাধ করার সাহস না পায়। প্রত্যক্ষ প্রমাণ থাকার পরেও ধর্ষকরা সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আমরা জানতে চাই কেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। এতে তো ধর্ষকরা আরো উৎসাহিত হচ্ছে। বানাসাস’র পক্ষ থেকে ৮ দাবি পেশ করা হয়। দাবিসমূহ : ১/ধর্ষণ আইন পুন:বিবেচনার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা নিশ্চিত করা। ২/ ধর্ষণজনিত ঘটনা বা অপরাধের জন্য আলাদা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং ৩০-৬০ কার্যদিবসের মাঝে বিচার সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া তৈরি করা। ৩/ ধর্ষিতার বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। ৪/ জেলায় জেলায় ধর্ষণ প্রতিরোধে পুলিশের আলাদা ট্রাস্কফোর্স গঠন করা। ৫/ নির্জন রাস্তায় সচল সিসিটিভি স্থাপন। ৬/ পূর্ববর্তী সকল ধর্ষণ মামলার রায় ৬ মাসের মাঝে সম্পন্ন করা। ৭/ দলীয় মদদে কোনো ধর্ষণকে বা কোনো অপরাধকে আশ্রয় দেওয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৮/ বিশেষ বাহিনী গঠন করা হোক যারা শুধু ধর্ষণের বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে কাজ করবে। এই বিশেষ বাহিনীর উপর রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক নেতারা কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। দ্রুত গতির যানবাহন, হেলিকপ্টার এবং অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা সংবলিত বিশেষ এই বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। সমাবেশে বক্তারা দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবি জানান। বিএফইউজে’র বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ দ্বীপ আজাদ বলেন, দেশের প্রতিটি স্থরে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। আমি পুরুষ হিসেবে লজ্জিত। আর এভাবে চলতে দেয়া যায় না। আমরা এর কঠিন বিচার চাই। যদি তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা না যায় তবে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলবে। বিচারহীনতার এ যুগে একের পর এক যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত ও হতাশ। আমরা প্রত্যেকটি ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করছি। আর এভাবে চলতে দেয়া যায় না। বিএফইউজে’র নির্বাহী সদস্য শেখ মামুন বলেন, আজ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই আমরা এর প্রতিবাদে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছি। নারী নির্যাতনকারীরা অপরাধ করেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। অনেককে আবার আইনের আওতায় আনা হলেও নানাভাবে তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এ কারণে দেশে নারী নির্যাতন বেড়ে চলছে। মানববন্ধন থেকে বক্তারা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তাদের হোতাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। পরে ধর্ষকের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।