চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের হালিশহর থানা এলাকায় খুন হওয়া দিলীপ রায়ের জীবিত ফেরার ঘটনায় চারজনকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। মামলার নথিসহ নিহত দিলীপ রায়কে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইফুল্লাহ, মামলার কারাবন্দি আসামি জীবন চক্রবর্তী ও দুর্জয় আচার্য্যকে আগামী ২২শে অক্টোবর সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হালিশহর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কারাবন্দি আসামি দুর্জয় আচার্য্যের করা জামিন আবেদনের ওপর শুনানিতে নিহত দিলীপ রায়ের জীবিত ফিরে আসার বিষয়টি নজরে আসার পর ২৯শে সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার সময় আমি এ থানায় কর্মরত ছিলাম না। মামলাটি এখন তদন্ত করছেন পরিদর্শক সঞ্জয় সিংহ। তিনি মৃত ব্যক্তির পরিচয় জানার সন্ধান অব্যাহত রেখেছেন।
কারাবন্দি দুর্জয় আচার্য্যের আইনজীবী জাহিদুল আলম চৌধুরী জানান, অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গত বছরের ২৩শে এপ্রিল পুলিশ বাদী হয়ে হালিশহর থানায় হত্যা মামলা করে। এ ঘটনায় ২৫শে এপ্রিল জীবন চক্রবর্তী ও দুর্জয় আচার্য্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তাদের মধ্যে জীবন চক্রবর্তী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গাঁজা খাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিলীপ রায় নামের ওই ব্যক্তিকে হত্যা করেছে বলে জবানবন্দিতে জানান জীবন চক্রবর্তী। ঘটনার কয়েকদিন পর ওই বছরের ১লা মে দিলীপ রায়কে জীবিত অবস্থায় একই বিচারকের সামনে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট দিলীপকে নিজ জিম্মায় এবং পুলিশকে ৫ই ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে দুর্জয় আচার্য্য হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন।
দুর্জয় আচার্য্যের (১৭) মা সন্ধ্যা আচার্য্য বলেন, আমার ছেলে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় চাকরি করতো। একদিন সন্ধ্যায় পাশের একটি চা দোকানে গিয়েছিল সে। সেখান থেকে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়, সঙ্গে জীবন চক্রবর্তীকেও নিয়ে যায়। এরপর ছেলের উপর নির্মমভাবে নির্যাতন করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়েছে পুলিশ। আর জীবন চক্রবর্তীর পায়ের নখ উপড়ে ফেলেছে। ছোট্ট ছেলে, পুলিশের মারধর সইতে না পেরে তাদের শেখানো তথ্যই আদালতে গিয়ে বলেছে। আমার সন্তান নির্দোষ। আর যাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে সেই লোককে পরে পুলিশই জীবিত অবস্থায় পেয়েছে।
আসামি জীবন চক্রবর্তীর (১৮) বাবা সুমন চক্রবর্তী বলেন, আমার ছেলে জিপিএইচ কারখানায় চাকরি করতো। একদিন সন্ধ্যায় পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমার সঙ্গে আর দেখা করতে দেয়া হয়নি। পরে পুলিশ জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে। তিনি বলেন, স্বীকারোক্তির বিষয়ে কারাগারে গিয়ে সন্তানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। সে বলেছে, মারধর সইতে না পেরে এমন কথা বলেছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ২০১৯ সালের ২১শে এপ্রিল সন্ধ্যায় হালিশহর থানা এলাকায় পোড়া ও অর্ধগলিত একটি মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. শাহাজাহান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এর তদন্তভার তার ওপর পড়েছিল।
সাইফুল্লাহ বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি মোবাইল সিমের প্যাকেট উদ্ধার হয়েছিল। সেই সিমের নম্বর ধরে অনুসন্ধানে জানতে পারি, সিমটি মরদেহ উদ্ধারের দু’দিন আগে চালু হয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি নম্বরে সেটি দিয়ে যোগাযোগ হয়েছে। সেই সূত্র ধরে জীবন ও দুর্জয়কে শনাক্ত করা হয়েছে।
সাইফুল্লাহ আরো বলেন, আসামি জীবন জবানবন্দিতে সপষ্টভাবে বলেছে, গাঁজা খাওয়া এবং ৫০ টাকা ধারের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে দিলীপকে হত্যা করা হয়েছে। ইটের টুকরো দিয়ে কিভাবে আঘাত করেছে সেই তথ্যও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে। ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো এবং জীবনের নখ উপড়ে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তবে আসামির জবানবন্দি অসংলগ্ন মনে হওয়ায় দিলীপের প্রকৃত পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। পরে দিলীপকে (৩৬) জীবিত উদ্ধার করি। আদালতে প্রতিবেদন দিই। পরে আদালত দিলীপকে নিজ জিম্মায় জামিন দেন। এরপর প্রকৃত নিহত ব্যক্তির পরিচয় পরবর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তারা উদ্ধার করতে পারেননি বলে জানান এসআই সাইফুল্লাহ।