ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র ৩২ দিন বাকি। এরইমধ্যে গতকাল করোনায় আক্রান্ত হলেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পেরও করোনা শনাক্ত হয়েছে। ট্রাম্প নিজেই এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন। ট্রাম্পের এই অসুস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। তিনি অসমর্থ হলে কে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন সে প্রশ্ন এরইমধ্যে সামনে চলে এসেছে। যদিও হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডি ভালো আছেন। কিন্তু ট্রাম্পের বয়স ৭৪।
যে বয়সকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। করোনার শুরু থেকেই অবশ্য ট্রাম্প ছিলেন শিরোনামে। করোনাকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছিলেন না তিনি। নানা সময়ে এটিকে হালকা বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এমনকি মাস্কও পরতে চাইছিলেন না। প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকেও মাস্ক পরা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তিনি।
শুক্রবার করা টুইটে ট্রামপ লিখেন, আমি ও মেলানিয়া করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ শনাক্ত হয়েছি। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কোয়ারেন্টিনে চলে যাচ্ছি এবং সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করছি। আমরা একসঙ্গে এ থেকে বেরিয়ে আসবো। সমপ্রতি ট্রামেপর বিশেষ উপদেষ্টা হোপ হিকস করোনা আক্রান্ত হন। তার সঙ্গে ট্রাম্পের একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিশেষ বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানেও ট্রাম্পের কাছাকাছি ছিলেন হিকস। গত বুধবার বিমানেই অসুস্থ বোধ করেন হিকস। তাকে তখনই আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর দ্রুত করোনা টেস্ট করেন ট্রামপসহ বিমানে থাকা সকলেই।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি নিয়ে বিভিন্ন সময় করা ট্রামেপর বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা থাকলেও তার অসুস্থতার খবরে তিনি দেশটির রাজনীতিবিদ এবং বিরোধীদের থেকে শুভ কামনা পাচ্ছেন। কারণ, দেশটিতে প্রেসিডেন্টের অসুস্থতাকে সার্বিকভাবে দেশের নিরাপত্তার ওপর হুমকি হিসেবে দেখা হয়। দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা পরিচালনাকারীর অসুস্থতায় জাতীয় ঐক্যের প্রতি জোড় দিতে দেখা গেছে। নেতৃত্বের শূন্য স্থানকে দুর্বলতা হিসেবে নিয়ে এর সুযোগ নিতে পারে মার্কিন শত্রুরা এমন আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে করোনা আক্রান্ত ট্রামপ নিকট ভবিষ্যতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে সেক্ষেত্রে ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়া কি হবে স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ট্রাম্প অসমর্থ হলে দায়িত্ব পালন করবেন মাইক পেন্স
এ ধরনের পরিস্থিতিতে এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দু’জন প্রেসিডেন্ট সাময়িকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, ট্রামপ যদি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ক্ষমতা পরিচালনায় অসমর্থ হয়ে পড়েন তাহলে তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে চাপ প্রয়োগ করা হতে পারে এবং রিপাবলিকান পার্টিও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
হোয়াইট হাউস থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি সুস্থ রয়েছেন। তবে তিনি যদি নিকট ভবিষ্যতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে সাংবিধানিক নিয়মে সাময়িক সময়ের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মাইক পেন্স। মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকর হয় ১৯৬৭ সালে। এর তৃতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ট্রামপ চাইলে লিখিতভাবে তার অসমর্থতার কথা জানিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন। এ সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট। এরপর ট্রাম্প সুস্থ হলে এবং নিজেকে ক্ষমতা গ্রহণে সক্ষম মনে করলে আবারো লিখিতভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারবেন। আবার ২৫তম সংশোধনীর চতুর্থ অনুচ্ছেদেই প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দেয়ার আরেকটি বিকল্প উল্লেখ রয়েছে। যদি ক্যাবিনেট মনে করে যে প্রেসিডেন্ট সরকার পরিচালনায় অসমর্থ তাহলে তারা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে।
১৯৮৫ সালের ১৩ই জুলাই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানকে সাময়িক সময়ের জন্য একটি অপারেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। অপারেশন চলাকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ৮ঘণ্টার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এজন্য রোনাল্ড রিগ্যানকে লিখিত দিতে হয়েছিল। সকালে ১১টা ২৮ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিট পর্যন্ত জর্জ বুশ দায়িত্ব পালনের পর রোনাল্ড রিগ্যান আরেকটি লিখিত বার্তা দিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসেন।
এরপর ২০০২ সালের ২৯শে জুন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াকার বুশও সাময়িক সময়ের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। সে সময়ও চেনিকে দুই ঘণ্টার জন্য প্রেসিডেন্ট হতে হয়েছিল। ২০০৭ সালে আবারো দুই ঘণ্টার জন্য চেনির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন বুশ।
চতুর্থ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্যাবিনেট সদস্যদেরকে কংগ্রেসের উভয় হাউজের নেতাদেরকে জানাতে হবে যে, প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা পরিচালনায় অক্ষম। এ রকম পরিস্থিতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, যদি ভাইস প্রেসিডেন্টও ক্ষমতা পরিচালনায় অসমর্থ হয় তাহলে তা চলে যাবে হাউজের সিপকারের কাছে অর্থাৎ ন্যান্সি পেলোসির কাছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় প্রভাব আরেকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে, তা হলো ট্রামেপর করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি তার নির্বাচনী প্রচারণাকে কতোখানি প্রভাবিত করবে। আপাতত মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী প্রচারণা থামিয়ে রাখার কোনো বিকল্প তার কাছে নেই। তার সুস্থ হয়ে উঠতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ লাগবে। যদি তারা গুরুতরভাবে সংক্রমিত নাও হয়ে থাকেন তারপরেও তাদের অন্তত আরো ১০ দিন নিজেদের আলাদা করে রাখতে হবে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি বড় দুর্যোগের মতো। তিনি হয়তো বেশ কয়েকটি প্রদেশে জো বাইডেনের থেকে প্রচারণায় পিছিয়ে যাবেন। তাকে এই ঘটনা থেকে একটি ‘গেম চেঞ্জার’ উপাদান বের করতে হবে। নইলে প্রচারণায় যে ক্ষতি হয়েছে তিনি তা আর কোনোভাবে কাটিয়ে উঠতে পারবেন না।