করোনার কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর এবার দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেয়ার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের মতামত নিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যায়লগুলো পর্যাযক্রমে খুলে দেয়ার বিষয়ে আগামী রোববার একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে সূত্র বলছে, স্কুল খুলে দেয়ার ঘোষণাএলেও সব স্কুল একসাথে না খুলে বরং কয়েকটি ধাপে এবং বিভিন্ন শ্রেণীর ক্লাসও পালাক্রমে নেয়ার নির্দেশনা আসতে পারে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বেশ কিছু স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তামূলক নির্দেশনাও আসতে পারে। ইতোমধ্যে ৫০ দফার নির্দেশনামূলক একটি চিঠিও জেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বরাবরে পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি প্রত্যেক জেলা শিক্ষা অফিসের তত্ত্বাবধানে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং সহকারী শিক্ষা অফিসারদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে উপজেলাভিত্তিক প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে স্কুল খোলার বিষয়ে মতবিনিময় সভা হয়েছে। সভায় প্রত্যেকের মতামত গ্রহণ করে সেগুলোকে সামারি করে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। পরে জেলা থেকে ডিপিইতে জমা হওয়া সংশ্লিষ্টদের মতামত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে সভা করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপজলা শিক্ষা অফিসে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে গুমাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজনিন আক্তার নয়া দিগন্তকে জানান, স্কুল খোলার কমপক্ষে ১৫ দিন আগে শুধু শিক্ষকদের নিয়ে স্কুল পরিচালনা করতে হবে। বলতে গেলে এক ধরনের রিহার্সালই করতে হবে। কিভাবে শিশুরা স্কুলে আসবে, অভিভাবকদের দায়িত্ব কী হবে, স্কুলে কিভাবে পাঠদান ও শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করা হবে অর্থাৎ সামগ্রিক বিষয়ে আগে থেকেই একটি প্রস্তুতির ব্যাপার থাকবে। আমরা এমনটিই মতামত দিয়েছি। তবে দেখা যাক সরকার যেটি ভালো মনে করবে আশা করছি সেটির আলোকেই সিদ্ধান্ত আসবে।
অন্য দিকে বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে অনেকে এমনো মতামতা দিয়েছেন, জেলা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেয়ার পক্ষে তারা। এভাবে পর্যায়ক্রমে ৫০ শতাংশ এরপর ৭৫ শতাংশ। শতভাগ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরই সব বিদ্যালয় খুলে দেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন অনেক কর্মকর্তা।
এ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা থেকে আসা কর্মকর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে ২৭ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সভা করে স্কুল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই আমাদের অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা এমনিতেই একটু বেশি সংবেদনশীল। তাই তাদের ঝুঁকিও একটু বেশি। তবে এর পরেও সব দিক বিবেচনা করেই সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো কিভাবে চালু করা যায়, সে বিষয়ে মাঠপর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করে পরামর্শ নেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি জেলার শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিয়ম করেছি। তারা বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন। অনেকে প্রথম ধাপে জেলা পর্যায়ের ২৫ শতাংশ বিদ্যালয় খুলে দেয়ার প্রস্তাব জানিয়েছেন। আরো অনেক জেলার সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে তারা সে সব পরামর্শ দেবেন, তার আলোকে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে সভা করা হবে। এরপরেই মূলত আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারব। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়গুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।