প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ধাক্কায় জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছেন দেশে থাকা প্রবাসীরা। করোনা শুরুর আগে তাদের কেউ ছুটিতে এসেছিলেন। আবার কেউবা এসেছেন করোনা শুরুর পর। করোনা সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হওয়ায় বৈশ্বিক যোগাযোগে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে তাতে বিপাকে পড়েছেন তারা। কারও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারও কাজের অনুমতি হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় কর্মস্থলে ফিরতে মরিয়া এসব প্রবাসীরা বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায়। বিদেশে সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরবে বিমান যোগাযোগ শুরুর খবর আসার পর বিমান টিকিটের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন প্রবাসীরা।
কিন্তু গত কয়েক দিনে তাদের যাত্রার বিষয়ে কোনো সুখবর তৈরি হয়নি। সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স এবং বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে প্রবাসীদের সৌদি ফেরার সুযোগ থাকলেও অনুমতি জটিলতায় গতকাল পর্যন্ত কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনার পর গত সাড়ে ৫ মাসে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০৬ জন পুরুষ। আর ১১ হাজার ৭০৩ জন নারী। চলতি সপ্তাহে ফেরত এসেছেন ১৬ হাজার ৯৬ জন। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় ৩২টি দেশ থেকে তারা বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। সবচেয়ে বেশি ফিরেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩৬ হাজার ৫৩৩ জন।
দেশে আসা প্রবাসীদের মধ্যে বিদেশে কাজ হারানোসহ নানা ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে সব মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী দেশে আটকা পড়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। বাংলাদেশ বিমান জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তারা ৫টি যাত্রীবাহী এবং বাণিজ্যিক ও কার্গো ফ্লাইট চালু করেছেন। ৫টির মধ্যে ৩টি যাত্রীবাহী ও বাণ্যিজিক এবং ২টি কার্গোবাহী। মালয়েশিয়া, আমেরিকা এবং লন্ডনে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালু হয়েছে। আর গুয়াংজু ও হংকংয়ে কার্গো ফ্লাইট চলছে।
বাংলাদেশের শ্রম বাজার মধ্যপ্রাচ্যসহ বাকি দুনিয়ার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বাকি ফ্লাইট কখন চালু হবে তা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। তবে জানা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশ পুরোদমে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন যদি ফ্লাইট চালু না হয় তাহলে দেশে আসা প্রবাসীরা বড় ক্ষতির মধ্যে পড়ে যেতে পারেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকাব্বের হোসেন মানবজমিনকে জানান, করোনায় বড় ধাক্কা গেছে এভিয়েশন খাতে। ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সরকারি আদেশে গত ২১শে মার্চ থেকে বাংলাদেশে সব দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সোয়া ৩ মাস বন্ধ থাকার পর আংশিক ৩রা জুলাই ফ্লাইট চালু করা হয়। তিনি আরো জানান, এখন মাত্র ৫টি গন্তব্যে ফ্লাইট চালু রয়েছে। মালয়েশিয়া, লন্ডন ও আমেরিকা যাত্রীবাহী আর গুয়াংজু এবং হংকং এ কার্গো ফ্লাইট। নজর রাখা হচ্ছে পরিস্থিতির ওপর। তবে কবে নাগাদ সব দেশের ফ্লাইট চালু হবে তা তিনি জানাতে পারেননি।
১৮ যাত্রীরও করোনা পজেটিভ হয়েছিল ইতালিতে। এরপরই দেশটির সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, গত ৩রা জুলাই তুর্কি ও ঢাকা রুটে ফ্লাইট চালুর কথা ছিল টার্কিশ এয়ারলাইন্সের। তবে হঠাৎ করেই ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় তুরস্ক। কিছুদিনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চলাচল করলেও আবারো তা বন্ধ হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশসমূহে। বাংলাদেশিদের জন্য একইরকম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও।
সূত্র জানায়, করোনার কারণে বিদেশে নতুন কর্মী যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার লোক বিদেশে নানামুখী কর্মসংস্থানের জন্য পাড়ি জমান। সেই হিসাবে গত ৫ মাসে প্রায় ৩ লাখ লোক যেতে পারেননি। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখের মতো পাসপোর্ট, ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট তৈরি ছিল। আবার এই ৫ মাসে দেশে এসেছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ২০৯ জন প্রবাসী। সব মিলিয়ে ৫ লাখ প্রবাসী ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে তারা বাংলাদেশে আটকা পড়েছেন।
সর্বশেষ: সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া প্রবাসীদের আবারো সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে আকামার মেয়াদ আরো ৩ মাস বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে।