মোহাম্মদ আলম : ভুতপূর্ব টঙ্গী থানা ও পৌর ওয়ার্ডের কমিটির বয়স ১৭ বছর। ভাওয়াল বীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের তত্ত্ববধানে এই কমিটি গঠন করা হয়। একথা জানিয়েছেন ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ জালাল উদ্দিন।
জানা গেছে, মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল সাংসদ হবার পর কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর পূর্নগঠন ছাড়াই চলছে। পিতার হাতে গড়া কমিটি, তাছাড়া পছন্দের এবং আনুগত্যও কমিটি পূর্নগঠনে বিলম্বতা অন্যতম কারন। অথচ এই সময়ে কেন্দ্রীয় কমিটি একাধিক কাউন্সিল করেছে। নেতৃত্বের নবায়ন হয়েছে।
গাজীপুরেও তার ব্যতিক্রম নয়। কহর দরিয়া তুরাগ যেমন সেই পূর্বের অবস্থায় নেই। পৌর হয়েছে সিটি। গাজীপুরের রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। ৮ অক্টোবর গাজীপুর মহানগর কমিটির ৩ বছর পূর্ণ হবে। কমিটির মেয়াদ শেষের পথে হলেও মহানগরের ৩৫টি ওয়ার্ডে এখনো কমিটি হয়নি। মহানগরে সংসদীয় আসন গাজীপুর-২ এর সাংসদ এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেলের নির্বাচনী এলাকা এই ৩৫ ওয়ার্ড। গাজীপুর-১ আসনে অবস্থিত মহানগরের ১৮ ওয়ার্ডের কমিটি পূর্বেই দেয়া হয়েছে। এরপরও আরও ৪ ওয়ার্ডে কমিটি দেয়া বাকি।
দলীয় বিধান অনুযায়ী মহানগর কমিটিই ওয়ার্ড কমিটি দেবার এখাতিয়ার রাখে। স্থানীয় সাংসদ হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর পছন্দের মূল্যায়ন করতে গিয়ে মহানগর কমিটি তাদের মেয়াদের শেষ প্রান্তে। তবু একমত হয়ে দিতে পারেনি ৩৫টি ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে। এ নিয়ে তৃণমূল নেতৃবৃন্দের মাঝে চাপা ক্ষোভ। পদ প্রত্যাসী অনেক নেতা বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্যের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
পদ প্রত্যাসী একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, দীর্ঘদিন কমিটির পূর্নগঠন হয়নি। যদি যথা সময়ে কমিটি পূর্ণগঠন হতো তাহলে আরো নতুন নতুন নেতা আসতো। দীর্ঘ বিরতির কারনে নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রধান দুটি পদে প্রার্থী বেশী। মহানগর নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় এমপি নিজ নিজ অনুসারীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে কেহ কাহাকেও ছাড় দিতে নারাজ। পছন্দের প্রার্থী নিয়ে এমন টানাটানিতে ক্ষতি হয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের। দীর্ঘদিন রাজনীতির সাথে থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন অনেক কর্মী। ক্ষোভে দুঃখে রাজনীতি ছেড়েছেন অনেকে। স্বপ্নবাজ অনেক নেতা রাজনীনৈতিক কর্মী হিসেবে মৃত্যুবরণও করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার ভাষ্য, ওয়ার্ডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে মহানগর কমিটি ও প্রতিমন্ত্রীর সমণ¦য় না হবার কারনেই এই অহেতুক বিলম্ব। মহানগর সভাপতি মোঃ আজতম উল্লা খান ও সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রতিমন্ত্রীর সাথে ডজনের বেশী বৈঠক করেও এর সুরাহা করতে পারেননি।
বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ ওয়ার্ডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ৭৫ পদে পছন্দের ২২ জন নেতা নির্বাচনের জন্য প্রতিমন্ত্রী মহোদয়কে প্রস্তাব দিয়েছে মহানগর কমিটি। কিন্তু তিনি এতে সম্মত না হয়ে ৩৫ ওয়ার্ডে অন্তত: একজন করে পছন্দের নেতা রাখার দাবি জানিয়েছেন। মহানগর কমিটি এই প্রস্তাবে একমত না হবার কারনে ঝুলে আছে কমিটি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে অসম্পন্ন সাংগাঠনিক কমিটি পূর্ণগঠনের নির্দেশ দেন। দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভাপতির নির্দেশ মোতাবেক কমিটি পূর্ণগঠনে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেন। সারাদেশের মত গাজীপুরেও আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
তৃণমূল আওয়ামী লীগ কর্মীদের দাবি, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দলের স্বার্থকে বড় করে দেখুক। দুঃসময়ে দলের জন্য কাজ করা ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করা হোক। শুধুমাত্র নিজ নিজ পছন্দের মানুষ বলেই মাদক কারবারী, সন্ত্রাসী, ভুমিদস্যু বা কথিত হাইব্রিড নেতারা যেন কোনভাবে কমিটিতে না আসে। সব কিছু বিবেচনায় তৃণমূলের দাবি একটাই কমিটি চাই।
মন্তব্য কলাম
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
১৫/০৯/২০২০