কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের অপসারণকৃত চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রফিকুল ইসলাম রেনুর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে উপজেলা শ্রমিক লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষ সশস্ত্র মহড়া দেয়। রোববার সকাল ১১টার দিকে পৌরসদরের উপজেলা পরিষদ গেইটের সামনে কিশোরগঞ্জ-ঢাকা সড়কে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পথচারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
ঘটনার সময় শটগান হাতে জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ এবং রামদা হাতে পাকুন্দিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. নাজমুল হক দেওয়ান প্রতিপক্ষের দিকে মারমুখী হয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন এমন কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। দুই নেতাই স্থানীয় কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে সংঘটিত উপজেলার ষাইটকাহন গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় গত ৫ই জুলাই এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মো. রফিকুল ইসলাম রেনুকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া সকল ইউপি চেয়ারম্যানের অনাস্থা প্রস্তাবের আলোকে গত ৬ই আগস্ট অপর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে মো. রফিকুল ইসলাম রেনুকে অপসারণ করে পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের দু’টি প্রজ্ঞাপনই হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন। এর মধ্যে গত ১৭ই আগস্ট রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গত ৬ই আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ প্রদান করে আদেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৮ই সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা-২ শাখা থেকে এক পত্রের মাধ্যমে স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করার অর্থাৎ স্থগিতাদেশ ভ্যাকেট করার আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে মর্মে জানানো হয়।
ওই পত্রে মাননীয় আদালতের পরবর্তী আদেশ/নির্দেশনা পাওয়ার পর পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সুযোগ চেয়ে দাখিলকৃত তার আবেদনের বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের ব্যক্তিগত সহকারী আমজাদ হোসেন লিটন বাদী হয়ে গত ২৪শে মে কটিয়াদী থানায় রফিকুল ইসলাম রেনুর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। গত ৯ই সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায়ও হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন লাভ করেন।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যান্য সূত্র জানায়, রফিকুল ইসলাম রেনু অপসারণের আদেশ স্থগিতাদেশের হাইকোর্টের কপি নিয়ে রোববার সকালে ঢাকা থেকে পাকুন্দিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে শত শত নেতাকর্মী মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে থানারঘাট এলাকায় অবস্থান নেয়। সেখান থেকে বেলা ১১টার দিকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাকুন্দিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন রেনু। সমর্থকসহ রেনু’র পাকুন্দিয়া সদরে আসার আগেই প্রতিপক্ষ সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদর সমর্থক হিসেবে পরিচিত উপজেলা শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের নামে বিভিন্ন স্লোগানও দেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাকুন্দিয়া পৌরসদর বাজারের থানা মোড়ে পৌঁছলে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা রফিকুল ইসলাম রেনুর মিছিল বহরে বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের সময় ইউএনও অফিসের অফিস সহায়ক হাবিবুর রহমান ও পথচারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে এ ঘটনার পর শটগান হাতে জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ এবং রামদা হাতে পাকুন্দিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. নাজমুল হক দেওয়ানের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. নাজমুল হক দেওয়ান বলেন, রফিকুল ইসলাম রেনুর পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে উপজেলায় প্রবেশ করতে চেয়েছিল। মিছিল থেকে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানোয় আমিসহ অন্যরা হামলা প্রতিহত করতে তাদের ধাওয়া দেই।
এ ব্যাপারে জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ বলেন, আমি ঢাকায় যাচ্ছিলাম। পথে পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজের সামনে আমার গাড়িতে ঢিল মারলে আমি গাড়ি থেকে নেমে সামনে যাই। এ সময় আমার হাতে লাইসেন্স করা শটগান ছিল। এই ছবি ফেসবুকে ছেড়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।