ঢাকা: গবেষণা চৌর্যবৃত্তির সাজা কী এবং কোন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে হবে তা নির্ধারণে কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণা চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে কি হবে না কিংবা কোন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তাদের শাস্তি দেয়া হবে তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে এ কমিটি গঠন করা হয়। গবেষণা চুরিতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক হলেন- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান। তারা ২০১৬ সালে যৌথভাবে আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। যেখানে ৮০ শতাংশই বিখ্যাত দার্শনিক মিশেল ফুকোর ১৯৮২ সালে শিকাগো জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ ‘দ্যা সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ থেকে কপি করা। বিষয়টি সামনে আসার পর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় তৎকালীন প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমেদকে। কিন্তু তদন্ত কমিটি অভিযোগের প্রমাণ পেলেও সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজানের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার শাস্তির সুপারিশ করেনি।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এএফএম মেজবাহ উদ্দীনকে সুপারিশের জন্য প্রতিবেদনটি দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত বুধবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় তিনি বিষয়টি উত্থাপন করলে এক সিন্ডিকেট সদস্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চৌর্যবৃত্তির সাজা নির্ধারণে ট্রাইব্যুনাল গঠনের নীতি ও রেওয়াজ না থাকায় জটিলতা তৈরি হয়। পরে ভবিষ্যতের আইনি জটিলতা এড়াতে গবেষণা চৌর্যবৃত্তির বিষয়ে করণীয় কী হবে তা নির্ধারণে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে। আর দুই সদস্য হলেন- আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জামান। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল মানবজমিনকে বলেন, গবেষণা চৌর্যবৃত্তি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অতি সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি দশ কার্যদিবসের মধ্যে করণীয় কী হবে তা নির্ধারণ করবে। এ নীতিমালার আলোকে গবেষণা চৌর্যবৃত্তিতে অভিযুক্তদের সাজা নির্ধারিত হবে। এদিকে মিশেল ফুকোর গবেষণা চুরির দায়ে অভিযুক্ত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গঠনের একটি প্রস্তাব আসে সিন্ডিকেটে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যেন কোনো ভুলভ্রান্তি না হয় সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতন। তাদের বিষয়ে এখনো ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়নি। ট্রাইব্যুনাল গঠন হবে, না বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ অনুসারে অন্য কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রো-ভিসি (শিক্ষা) আরো বলেন, আগে গবেষণা চৌর্যবৃত্তিতে যারা অভিযুক্ত হয়েছিলেন তাদের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়নি। এ ক্ষেত্রে কী হবে সেটাও পরিষ্কার নয়। তাই প্রশাসন বিষয়টির ব্যাপারে দেখেশুনে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আইনগত জটিলতায় না পড়তে হয়।