ঢাকা:থানায় নিয়ে জনি নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় পল্লবী থানার তৎকালীন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদসহ তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার অন্য দুই আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া বাকি তিন পুলিশ সদস্যের প্রত্যেককে বাদীপক্ষকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর মামলার প্রথম রায়। পুলিশ হেফাজতে জনিকে হত্যার অভিযোগে ২০১৪ সালের ৭ই আগস্ট আদালতে মামলা দায়ের করেন তার ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি রাতে পল্লবী থানার ইরানি ক্যাম্পে জনৈক বিল্লালের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। জনি, রকিসহ অন্যরা সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রাত ২টার দিকে পুলিশের সোর্স সুমন মদ খেয়ে স্টেজে উঠে মেয়েদের উত্যক্ত করছিলেন। জনি তাকে প্রথমে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেন। দ্বিতীয়বার একই কাজ করলে সুমনের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জনি সুমনকে থাপ্পড় মারেন। এর আধা ঘণ্টা পর এসআই জাহিদসহ ২৫-২৬ জন পুলিশ নিয়ে বিয়েবাড়িতে এসে ভাঙচুর করে জনি, রকিসহ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর এসআই জাহিদসহ অপর আসামিরা তাদের পল্লবী থানা হাজতে হকিস্টিক ও ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে বেদম পেটায়। জাহিদ জনির বুকের ওপর উঠে লাফালাফি করেন। জনি এ সময় একটু পানি খেতে চাইলে জাহিদ তার মুখে থু থু দেন। নির্যাতনের ফলে রকি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
জনিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশ দাবি করে, ইরানি ক্যাম্প ও রহমত ক্যাম্পের মধ্যে সংঘর্ষে জনি নিহত হয়েছেন।
আদালত এ মামলায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২০১৬ সালের ১৭ই এপ্রিল এ মামলায় এসআই জাহিদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। গত ২৪শে আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ ও পুলিশের সোর্স সুমন কারাগারে আছেন। একই থানার এসআই রাশেদুল ইসলাম জামিনে আছেন। এসআই কামরুজ্জামান মিন্টু এবং পুলিশের সোর্স রাসেল জামিনে নিয়ে পলাতক রয়েছেন।