মসজিদে বিস্ফোরণের কারণ বের করা হবে

Slider জাতীয়

নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা সেখানে গেছেন, নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ওই ঘটনা কেন ঘটলো, কীভাবে ঘটেছে সেই ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। আমি মনে করি এটি বের হবে।

গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের প্রথমদিনে সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন, সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম এবং ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আরও আলোচনায় অংশ নেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আওয়ামী লীগের শাজাহান খান, এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, সরকারি দলের শামসুল আলম দুদু, বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা ও বিএনপি’র হারুনুর রশীদ। আলোচনা শেষে শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। এরপর প্রয়াতদের বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান দেখাতে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন শেষে মোনাজাত করা হয়।
বিডিআর’র সত্য ঘটনা একদিন বের হবে: ২০০৯ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের সাহসী ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনার পেছনে কারা ছিল? আমরা তো কেবল সরকার গঠন করেছি।

এটা কোনোদিনই যুক্তিযুক্ত না, যে আমরা সরকার গঠন করেই এমন একটা ঘটনা ঘটাবো, যাতে দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। কাজেই যারা তখন ক্ষমতায় আসতে পারেনি তারাই তাদের পেছনে ছিল এতে কোনো সন্দেহ নেই। আসলে বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যা বলার ভালো একটা আর্ট আছে। সংসদ নেতা বলেন, বিডিআর’র ঘটনার সময় সাহারা খাতুনের সাহসী ভূমিকা দেখেছি। সাহারা আপা ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গেছেন। রাতের বেলা সেখানে গিয়ে বিডিআর সদস্যদের আর্মড সারেন্ডার করিয়েছেন। অনেক আর্মি অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন। এজন্য তার জীবনের ওপরও হুমকি এসেছিল। তার ওপর ওরা হামলা করতে গিয়েছিল। এ রকম অবস্থায় এডভোকেট সাহারা খাতুন দুঃসাহসিক ভূমিকা রেখেছিলেন। কোনো সাধারণ মানুষ এই সাহস করতে পারতো না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি সততার সঙ্গে কাজ করেছিলেন। মন্ত্রী হিসেবে তিনি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ কঠিন দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। বিডিআর’র ঘটনাটি ছিল একটা অস্বাভাবিক ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় বিডিআর’র ঘটনা ঘটলো। বিডিআর’র ওই ঘটনায় যে অফিসাররা মারা যান তাদের মধ্যে ৩৩ জনই আওয়ামী লীগ পরিবারের। এমনকি বিডিআর’র ডিজি এই পার্লামেন্টের সদস্য লুৎফুল হাই সাচ্চুর আপন চাচাতো ভাই ছিলেন। তিনি বলেন, সে সময় ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চেষ্টা ছিল এটাকে থামানো। আমাদের যারা অফিসার আছে তাদের রক্ষা করা, তাদের পরিবারগুলো রক্ষা করা।
তিনি বলেন, বিডিআর এর ঘটনাটি ছিল একটা অস্বাভাবিক ঘটনা। আগের দিন গেলাম একটা ভালো পরিবেশ, পরেরদিন সেখানে এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটলো। এর পেছনে কারা আছে? আমরা তো কেবল সরকার গঠন করেছি। যারা তখন ক্ষমতায় আসতে পারে নাই তারাই তখন তাদের পেছনে ছিল এবং তাদের সঙ্গে ওই ১/১১ যারা সৃষ্টি করেছিল- যাদের ধারণা ছিল নির্বাচনে একটা ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে। কিন্তু যখন দেখলো আওয়ামী লীগ মেজরিটি নিয়ে চলে এলো- তখন সবকিছুকে নস্যাত করার পরিকল্পনা যাদের ভেতরে ছিল তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। একদিন না একদিন এই সত্যটা বের হবে। বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যা বলার ভালো একটা আর্ট আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তারা (বিএনপি-জামায়াত) ব্যাপকভাবে প্রচার করে ফেলেছিল আমি নাকি নিজেই গ্রেনেড নিয়ে নিজেই মেরেছি! বিডিআর’র ঘটনার পরও তারা একইভাবে অপপ্রচার শুরু করেছিল। প্রয়াত সাহারা খাতুনের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক আন্দোলন-সংগ্রামে সাহারা খাতুন অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতেন। কোনো ভয়ভীতি কিছুই তাঁর ছিল না। এরশাদের আমলে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরও একই অত্যাচার। ওই সময় ছিল সীমাহীন অত্যাচার। একদিকে পুলিশ বাহিনী, আরেকদিকে ছাত্রদলের ক্যাডার বাহিনী। খালেদা জিয়া নিজেই বলতেন ছাত্রদলকে দিয়েই নাকি আওয়ামী লীগকে সোজা করে দেবেন। তাদের অত্যাচারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মহিলা কর্মী কেউই বাদ যেত না। সাহারা খাতুন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, তাঁর কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। তিনি সবকিছু নেতাকর্মীদের বিলিয়ে দিয়েছেন। সারাক্ষণ দেশের জন্যই কাজ করেছেন। তার সঙ্গে আমার ছাত্রজীবন থেকেই পরিচয় ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে। ওয়ান-ইলেভেনের প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, ২০০৭ সালে যখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং একের পর এক মামলা দেয়া হয়। বিএনপি আমার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক আসার পর আরো ৫/৬টি মামলা দেয়া হয়। তাদের প্রচেষ্টা ছিল মামলাগুলো দ্রুত চালিয়ে আমাকে শাস্তি দিয়ে দেবে। বলতে গেলে একদিন পরপর আমাকে কোর্টে হাজিরা দিতে নেয়া হতো। আর এই মামলার সময় সাহারা আপা সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকতেন। মামলা পরিচালনা করতে আমাদের আইনজীবীরা এলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করতো, গ্রেপ্তার করতো। তাদের ছাড়িয়ে আনতে ছুটে যেতেন সাহারা আপা। এভাবে তাঁর সাহসী ভূমিকা আমরা দেখেছি।

কী কারণে মসজিদে বিস্ফোরণ তা বের হবে: মসজিদে বিস্ফোরণের ওই ঘটনা কেন ঘটেছে, তা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশেই মসজিদগুলোতে যারা অপরিকল্পিতভাবে ইচ্ছামতো মানে এয়ারকন্ডিশনার লাগাচ্ছেন বা যেখানে- সেখানে একটা মসজিদ গড়ে তুলছেন, সে জায়গাটা আদৌ একটা স্থাপনা করার মতো কি-না বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া বা সেভাবে নকশাগুলো করা হয়েছে কি-না সে বিষয়গুলো কিন্তু দেখা একান্ত প্রয়োজন। নইলে এ ধরনের দুর্ঘটনা যে কোনো সময় ঘটতে পারে- মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনা একটা ঘটে গেছে- এটা সত্যিই দুঃখজনক এবং যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। সরকার প্রধান বলেন, ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে, রোগীর অবস্থা সম্পর্কেও তিনি নিয়মিত খোঁজ রেখে আমাকে জানাচ্ছেন। অনেকজন এ পর্যন্ত মারা গেছেন এবং বাকি যারা তাদের বেশির ভাগের পোড়ার অবস্থা এত খারাপ, তারপরও চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের সব ধরনের চিকিৎসার আমরা ব্যবস্থা করেছি। এখন আল্লাহ্‌ যদি এদের জীবনটা ফিরিয়ে দিয়ে যান।

সংসদে প্রণব মুখার্জীকে স্মরণ: শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সদ্যপ্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, তার মৃত্যু উপমহাদেশের রাজনীতিতে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করবে। একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন। স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার মৃত্যু উপমহাদেশের রাজনীতিতে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করবে। উপমহাদেশের বর্ষীয়ান এই অসামপ্রদায়িক নেতার আত্মার শান্তি কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর কথা আমি সব সময় স্মরণ করি। তিনি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *