নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, স্পেশাল এক্সপার্ট যারা আছেন তাদের দিয়ে তদন্তটা করা উচিত। বিশেষ করে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ যারা আছেন। তাছাড়া আরো যদি কোনো এক্সপার্ট থাকে সেটা সেনাবাহিনীতে যদি থাকে তাদের দিয়ে হতে পারে, র্যাবে যদি থাকে তাদের দিয়ে হতে পারে। তদন্তটা যেন এমনভাবে হয় যাতে ভবিষ্যতে এ নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে। নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদ ট্রাজেডি নিয়ে রোববার মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জে অতীতে বেশকিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে ওই সব ঘটনার সঙ্গে এর কোনো মিল দেখেন কি না? শামীম ওসমান বলেন, ১৬ই জুনের বোমা হামলার ঘটনার অভিজ্ঞতা তো আছে আমাদের। যেহেতু ওই মর্মান্তিক ঘটনার অভিজ্ঞতা আছে সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রশ্নটা আমাদের মাথায় বার বার ঘুরপাক খায়। এ রকম কিছু হলো না তো? আমি মনে করি এ রকম কিছু হয় নাই। কিন্তু আমার কনসার্ন (উদ্বেগ)টা তো আছে।
তাছাড়া ব্লাস্টটা এতো পাওয়ারফুল হবে কেনো? নিশ্চয়ই পাওয়ারফুল বিস্ফোরণ ছিল, না হলে এতোগুলো মানুষ ৭০ থেকে ৯০ পার্সেন্ট বার্ন হয়ে যাবে কেনো? সেখানে কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ছিল কি না। এটাও খতিয়ে দেখা উচিৎ।
আপনার কথায় ইঙ্গিত ছিল যে, আপনি এটিকে নিছক র্দুঘটনা মনে করেন না, দুর্ঘটনা মনে না করার কি কি কারণ থাকতে পারে?
শামীম ওসমান বলেন, নরমালি মসজিদের নিচ দিয়ে গ্যাস লাইন হওয়ার কথা না। দ্বিতীয়ত মসজিদের ভেতরে এসি বিস্ফোরণ হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এসির কম্প্রেসারগুলো তো সব বাইরে ছিল। তাছাড়া একসঙ্গে ৬টি এসি বিস্ফোরণ হবে এটাও আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয় না।
মসজিদ কমিটি বলছেন গ্যাসের বুদ বুদ হচ্ছিল অনেকদিন ধরে। এ বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, এখানে একটা বিল্ডিং (মসজিদ) করা হয়েছে। মসিজদের নিচে মাটি তার উপর সিমেন্ট দিয়ে আরসিসি ঢালাই দেয়া হয়েছে। তারপর টাইলস করা হয়েছে মসজিদের ফ্লোর। তাহলে মাটি, আরসিসি, টাইলস তিনটা জিনিসকে ভেদ করে গ্যাস ভেতরে আসতে পারে এটা আমি নিশ্চিত না।
তিনি বলেন, নামাজ পড়তে মানুষ ভেতরে ঢুকেছে। আবার কেউ কেউ বের হয়েছে। যে বের হয়েছে সে দরজা খুলে বের হয়েছে। গ্যাস যদি ভেতরে থাকে তাহলে দরজা খোলার কারণে গ্যাস বের হয়ে যাওয়ার কথা। আর যদি গ্যাস না বেরিয়ে যেয়ে থাকে, তাহলে বিস্ফোরণটা হলো কিভাবে? দেয়ালে কিন্তু আগুনের বা বিস্ফোরণের ছোঁয়া দেখলাম না। কিন্তু মানুষগুলো সব আগুনে পুড়ে গেলো। ফ্যানগুলো নিচের দিক থেকে বেঁকে উপরের দিকে উঠে গেছে।
সো আমি বলছি না এটা নাশকতা। আমি বলছি সব সাইট বিবেচনা করার জন্য। এ বিষয়ে রাসায়নিক ব্যাপারে যারা এক্সপার্ট, তাদেরকে দিয়ে পরীক্ষা করা উচিৎ। বিদ্যুৎমন্ত্রীকে বলেছি মসজিদের মাটি খোঁড়া হোক। খুঁড়ে পাইপলাইন বের করে দেখা হোক গ্যাস লিকেজ হচ্ছিল কিনা। হলে সেটা মসজিদের ভেতর ঢুকেছিল কি না।
শামীম ওসমান বলেন, বিষয়টা হলো এতোগুলো মানুষের জীবন গেলো কেনো? হয়তো মৃত্যু এভাবেই ছিল। কিন্তু এই ধরনের এক্সিডেন্ট ঘটবে কেনো? ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সবদিক বিবেচনা করেই তদন্তটা করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
একটা অভিযোগ এসেছে। বলা হয়েছে চাঁদা দাবি করা হয়েছিল এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? মসজিদ কমিটির কোনো অবহেলা দেখতে পান কি না?
শামীম ওসমান বলেন, এখানে তিতাস ও মসজিদ কমিটি উভয়েই দায়ী। তাছাড়া মসজিদ কমিটি বলছে তারা ৯ মাস ধরে গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছেন। তাহলে মসজিদ বন্ধ করে দেননি কেনো? গ্যাসের যেই পাইপ লাইন থেকে লিক হচ্ছিল রাইজার বন্ধ করে দেন। এইটুকু করতে তো কোনো ডক্টরেট হতে হয় না। আর তিতাসের কোনো অবহেলা থাকলে তারও বিচার হওয়া উচিৎ। উল্লেখ, গত শুক্রবার এশার নামাজের পর নারায়ণগঞ্জে পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ও আগুনে অর্ধশতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হয়। এরমধ্যে ৩৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। গতকাল বিকাল পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জনের মৃত্য হয়।