রাতুল মন্ডল শ্রীপুর প্রতিনিধি: বাবা মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে রাসেল রানা বড়। সংসারে সুখের আশায় হতদরিদ্র পরিবারের বাবা বিভিন্ন বাড়ীতে দিনমজুরের কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। গত বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন রাসেল। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে স্থানীয় শিশু কানন একাডেমি নামের একটি বেসরকারী বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন।
এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে রাসেলের অংশগ্রহন ছিল প্রশংসনীয়। এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল সে। এটাই তার কাল হয়ে উঠলো। গত কয়েকদিন আগে স্থানীয় কয়েক মাদক ব্যবসায়ীদের ঘৃন্যতম এপেশা ছেড়ে আলোর পথে আসতে বলেন,এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মাদকব্যবসায়ীরা। গত শনিবার বিকেলে স্থানীয় বারতোপা বাজারে চায়ের স্টল থেকে ধরে নিয়ে যায় ইমরানের নের্তৃত্বে কয়েক মাদকব্যবসায়ী। পরে তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে বেধরক মারপিট করেন। একপর্যায়ে মারা গেলে রাতের আধারে উপজেলার লবলঙ্গ খালের তীরে তার মরদেহ ফেলে দেয়া হয়।
ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবরে বাবা তার বিভিন্ন স্বজনদের নিয়ে সারারাত খোঁজতে থাকেন পরে রোববার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্থানীয় বিলাইঘাটা এলাকায় লবলঙ্গ খালের পাড় থেকে ছেলের ক্ষত বিক্ষত লাশ উদ্ধার করেন।
গাজীপুরের শ্রীপুরের সিংদিঘি গ্রামের সুজন আলীর ছেলে রাসেল। আর অভিযুক্ত ইমরান বারতোপা গ্রামের বাক্কার মন্ডলের ছেলে।
নিহত রাসেলের বাবা সুজন আলীর ভাষ্য, বহু কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। ছেলে বাড়ীর পাশেই একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতো। অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে ঘিরে। গতকাল দুপুরে বাড়ী থেকে বের হয়েছিল বাজারে যাওয়ার জন্য। তার বন্ধু তাকে মোটরসাইকেলে করে বাজার পর্যন্ত পৌছে দিয়েছিল। পরে সন্ধ্যায় খবর পান তার ছেলেকে ইমরান নামের এক যুবক বাজার থেকে ধরে নিয়ে মারধর করছে। সারারাত ছেলের সন্ধানে বাড়ী বাড়ী ঘুরেছেন। কিন্তু ছেলেকে পাওয়া যায়নি। সবাই বলছে অভিযুক্ত ইমরান কয়েকজনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে ঘুরেছেন আর মোড়ে মোড়ে নামিয়ে মারধর করেছেন।
তিনি আরো জানান, গত ২ সপ্তাহ আগে ইমরানকে স্থানীয় মাওনা পুলিশ ফাঁড়ির কনষ্টেবল মফিজুল ইসলাম বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে যান। পরে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেন। এর পর থেকে তার বাড়ীতে এসে হুমকী দিয়ে গেছে ইমরান। গতকাল তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ইমরানের বাবার হাতে পায়ে ধরেছি। ইমরানকেও ছেড়ে দিতে মুঠোফোনে বারবার অনুরোধ করেছি,সে বলেছে কিছু মারধর করে ছেড়ে দিয়েছে রাতেই বাড়ী চলে আসবে। কিন্তু সে তো আর আসল না। সন্ধ্যা থেকে পুলিশ কনস্টেবল মফিজুলের সাথে বারবার ছেলেকে উদ্ধার করতে সহযোগিতা চেয়েছি,পুলিশও বলেছে সামান্য মারধর করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে সে বাড়ী চলে যাবে।
এ বিষয়ে মাওনা ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান,প্রায় দুসপ্তাহ আগে স্থানীয় সলিং মোড় থেকে ইমরানকে ফাঁড়িতে ডেকে নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না থাকায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। ঘটনার রাতে রাসেলের পরিবারের পক্ষ থেকে কনস্টেবল মফিজুলের সাথে যোগাযোগ করা হয় কিন্তু মফিজুল ফাঁড়ির উর্দ্ধতন কাউকে বিষয়টি অবহিত করেনি।
এ বিষয়ে মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য শহিদুল হক জানান,সম্প্রতি এলাকায় মাদক বৃদ্ধি পেয়েছে। ইমরান মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মাদকের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এভাবে একজন যুবককে ডেকে নিয়ে মারধর করে মেরে ফেলবে তা বিশ্বাস হচ্ছে না।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। ব্যাপক মারধর করে শ্বাসরোধ করে এ যুবককে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।