ঢাকা: বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ওপর নতুন করে সাইবার হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনলাইন ব্যাংকিং সেবা সীমিত করা হয়েছে। অনেক ব্যাংক এটিএম বুথের লেনদেন বন্ধ রেখেছে। সতর্কতা তুলে না নেয়া পর্যন্ত এসব ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, উত্তর কোরিয়ার একটি হ্যাকার গ্রুপ এই হামলা চালাতে পারে বলে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে তথ্য আসে, ’বিগল বয়েজ’ নামে একটি হ্যাকার গ্রুপ ব্যাংকগুলোতে সাইবার হামলা চালাতে পারে। গ্রুপটি উত্তর কোরিয়ার বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭শে আগস্ট ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার জন্য চিঠি দেয়।
চিঠি পাওয়ার সব ব্যাংকই বিশেষ ব্যবস্থা নেয়। কেউ তদারকি জোরদার করে আবার কেউ গ্রাহকদেরও সচেতন থাকার জন্য খুদে বার্তা দেয়।
বেসরকারি খাতের ডাচ বাংলা ব্যাংক সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্কের ব্যাংক। সারা দেশে ব্যাংকটির রয়েছে ৪ হাজার ৮০০ এটিএম ও ১ হাজার ১৬৪ টি ফাস্ট ট্রাক। একটি ফাস্ট ট্রাকে থাকে কয়েকটি এটিএম যন্ত্র। দেশের প্রায় সব ব্যাংকের গ্রাহকেরা ডাচ বাংলার এটিএম ব্যবহার করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ পাওয়ার পর ব্যাংকটি রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এটিএম বুথ বন্ধ রাখছে।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সতর্ক থাকার চিঠি পাওয়ার পর আমরা এটিএম লেনদেন রাতে বন্ধ রেখেছি। দিনে বুথগুলোতে কর্মকর্তা থাকে, তাদের নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। অনলাইন লেনদেন আগের মতো চলছে, তবে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে।
ঠিক একইভাবে সতর্কতা বাড়িয়েছে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর তথ্য প্রযুক্তি, অনলাইন ব্যাংকিং ও অলটারনেটিভ ডেলিভারি চ্যানেলের কর্মকর্তারা জানান, সতর্কতা আসায় তদারকি জোরদার করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পিন পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার বড় অঙ্কের অনলাইন লেনদেনে পৃথক তদারকিও করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের বাইরের লেনদেনের।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরিতেও (হ্যাকিং) উত্তর কোরিয়ার একটি চক্র জড়িত ছিল বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) তদন্তে বেরিয়ে এসেছিলে। চক্রটি ২০১৪ সাল থেকে সক্রিয় হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ই-মেইলে চাকরির আবেদনের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে। এসব মেইলে যুক্ত ছিল জীবনবৃত্তান্ত নামের একটি জিপ ফাইল। এই ফাইল ছিল পুরোপুরি ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর কম্পিউটার প্রোগ্রাম।
চক্রটি ম্যালওয়্যারের মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপরই ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (৬৮০ কোটি টাকা) চুরি হয়। সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) হলো আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেন-সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের নেটওয়ার্ক। এতে ভুয়া অনুরোধ পাঠিয়ে ওই অর্থ বের করে নেয় চক্রটি।
রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে ও দোষীদের বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেছে বাংলাদেশ। তবে এতে শুধু ফিলিপাইনের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থাকে আসামি করা হয়েছে। আর টাকা ফেরতের আশাও ক্ষীণ হয়ে আসছে।