মাদক পার্টিতে ধর্ষণ- ক্ষোভে উত্তাল মৌলভীবাজার

Slider জাতীয়

মৌলভীবাজার: ন্যক্কারজনক ওই অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতিবাদে উত্তাল মৌলভীবাজার। এখন জেলা জুড়ে ওই ঘটনার প্রতিবাদে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান। মানববন্ধন ও প্রতিবাদী পথ সভায় এখন সরগরম হয়ে উঠছে জেলা শহর। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের চৌমহনা চত্তরে সর্বস্থরের মানুষের অংশগ্রহনে চলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদী পথ সভা। মানববন্ধন ও প্রতিবাদী পথ সভায় নানা দাবি দাওয়া,ধর্ষণ ও মাদকের বিরুদ্ধে নানা প্রতিবাদী প্লেকার্ড ছিলো সবার হাতে হাতে। ওখানে প্রতিবাদ জানাতে আসা অংশগ্রহণকারীরা বলছেন ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সহযোগী হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র:) স্মৃতি বিজড়িত এজেলা শহরে মাদক পার্টি দিয়ে ধর্ষণ এরপর তা নিজ উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনার আদ্যোপান্ত প্রচারে তারা বিস্মিত। তারা আলাদা ভাবে পুলিশ ও জেলা প্রশাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি দিচ্ছেন।

তারা সকলেই এমন কুলাংগার স্বঘোষিত মাদকসেবী ও ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্ঠান্তমূলক আইনী পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন এরপরও দাবি আদায় না হলে পর্যায়ক্রমে নিয়ে আসবেন কঠোর নানা আন্দোলন কর্মসূচী। এদিক পার্টি ও ধর্ষণ ঘটনার আদ্যোপান্ত নিজেরা নিজেদের ফেইসবুকে প্রচার করার দূঃসাহসের প্রতিবাদ ও তাদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তির দাবিতে জেলার সচেতনমহল,সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে নাগরিকসমাজ মৌলভীবাজারের উদ্যোগে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে শহরের চৌমুহনা চত্বরে মৌলভীবাজারের শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন শেখ বোরহান উদ্দিন (রহঃ) ইসলামী সোসাইটির প্রতিষ্টাতা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট সংগঠক এম, মুহিবুর রহমান মুহিব এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

বিভিন্ন শ্রেণী, পেশার মানুষের অংশগ্রহনে আয়োজিত মানববন্ধনে একাত্মতা পোষন করে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট নাট্যকার ও সাংস্কৃকিত ব্যক্তিত্য খালেদ চৌধুরী, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সচেতন নাগরিক ফোরাম (সনাফ) মৌলভীবাজারের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, বিশিষ্ট সমাজ সেবক সৈয়দ কুদরত উল্লাহ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ শাহাবুদ্দিন আহমদ, যৌন হয়রানী নির্মূলকরন নেটওয়ার্কের সভানেত্রী ও হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক রাশেদা বেগম, জেলা যুবকল্যাণ সংস্থার সভাপতি আলিম উদ্দিন হালিম, বাঁধন থিয়েটারের সভাপতি রুহেল আহমদ,সমাজসেবক কে,এম, আকলু। তরুণ সমাজকর্মী মিজানুর রহমান রাসেলের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-আদর মাদকাসক্তি পূনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক নিখিল তালুকদার, মেধা সংস্কৃতি বিকাশ পরিষদ রাজনগরের সাংগঠনিক সম্পাদক খছরুমিয়া চৌধূরী, কালেরকন্ঠ শুভ সংঘের সাধারন সম্পাদক তাকবীর হোসেন, তাকরীম ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম সরকার জুনেদ,স্বপ্নের ঢেউ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ শাহেদ আলী,মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটির মডারেটর ইমন আহমদ,স্পন্দন মৌলভীবাজারের সভাপতি ইহাম মুজাহিদ,সংগঠক আব্দুল মুত্তাকীন শিপলু,উই ফর বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী সদস্য ইমরান আহমদ, কামরুল ইসলাম,সমাজকর্মী এস.এস.রুহিন,মারুফ খান,তারেক আহমদ,মিনহাজ মুক্তি,তানভীর আহমদ,মোঃ মোস্তাকিম, রহমান মামুন,এস,এম,বশির আহমদ, সুহিন উদ্দিন, নাইম আহমদ তালুকদার, সোহান আহমদ, অন্তর দেবনাথ,তোফায়েল আহমদ, মোহন দেব, সোহেল আহমদ,মাহবুবুর রহমান অপু,আদনান ইমন, শাহ ওমর আলী, বন্দুনীড় সামাজিক সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান,ছাত্র কমিউনিটির সহ-সভাপতি মুনাইদ আহমদ মুন্না,সাধারণ সম্পাদক আহমদ রনি প্রমুখ। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তারা বলেন আমাদের শহর শান্তিপূর্ণ,সুশৃঙ্খল। এই শহরে মাদকের আসর বসিয়ে মদ্যপ অবস্থায় ধর্ষণের মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে তা নিজেদের ফেইসবুকে প্রচার করার যে দূঃসাহস ওরা দেখিয়েছে এজন্য তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান। অন্যতায় জেলার সর্বস্থরের মানুষকে নিয়ে দূর্বার কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি বাস্তবায়ন করা হবে। এবং নিন্দনীয় এধরণের অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলা হবে। বক্তরা বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকায় এ ধরনের কর্মকান্ড চলে আসছে অথচ সেখানে প্রশাসন নিরব ভুমিকায়। মাদক ও ধর্ষণের ব্যাপারে সরকার যেখানে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন সেখানে প্রশাসনের নাকের ডগায় এরকম একটি ঘটনায় বিস্মিত জেলার সর্বস্থরের মানুষ। হজরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা(রহঃ) পূন্য ভূমিতে এই বেহায়াপনা, অশ্লিল,অনৈতিক কার্যক্রম কোনভাবেই সহ্য করা যায়না। যেটা ভাবতেও ঘৃনা লাগে। এই ঘটনায় প্রতিবাদী কণ্ঠ সমাজকর্মী কেবি খান বিজয়ের উপর দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান বক্তারা। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রধান করা হয়।

এদিকে বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) জেলা যুব কল্যাণ সংস্থা মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ শাখার পক্ষ থেকে আহবায়ক জুবায়ের আহমেদ ও যুগ্ম আহবায়ক শেখ হেলাল আহমেদ এর নেতৃত্বে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফজলুল আলীর নিকট স্বারকলিপি প্রদান করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা যুব কল্যাণ সংস্থার সদস্য শেখ নিজাম আহমেদ। মাদকসেবী ধর্ষণের সহযোগি নানা কৃকর্মেও হোতা গাঁজাকুর সজিব তুষার ও রেজওয়ানা আক্তার মারিয়াকে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে বহিষ্কার করার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য ৩ আগস্ট রাতে মৌলভীবাজার শহরের সোনাপুর এলাকায় সাবেক জেলা ছাত্র মৈত্রী নেতা ও সংবাদকর্মী মাহমুদ এইচ খান নামের এক তরুণের ভাড়া বাসায় মাদক পার্টিতে অংশ নেওয়া এক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। ওই মাদক পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন পাঁচ জন। এর মধ্যে তিনজন তরুণ ও দু’জন তরুণী। ঘটনাটি প্রকাশ হয় মাহমুদ এইচ খানের গত ২৫ আগস্ট ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টের মাধ্যমে। মাহমুদ এইচ খানের এমন ফেসবুক পোস্ট ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এর প্রেক্ষিতে নিজ ফেসবুকে পাল্টা পোষ্ট দেন সজিব তুষার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *