গাজীপুর: গাজীপুর জেলায় স্বাস্থ্যসেবাখাত যেন কেউ দেখার নেই। জনগনের না গণমাধ্যমের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় না কেউ। জবাব দিহিতার এই নমুনা আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাবে তা সময় বলে দিবে।
রাজধানী ঢাকার সাথে গাজীপুর জেলা। ঢাকার জের বা গাজীপুরের জের পরস্পরের উপরে পড়ে। কিন্তু জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে ঢাকায় আছে গাজীপুরে নেই। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, গাজীপুরে মিডিয়া কর্মীরা তেমন সোচ্চার না থাকায় জবাবদিহিতা কেউ আমলে নিচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুর জেলায় প্রায় ৮০টির মত হাসপাতাল ক্লিনিক বা ডায়গনষ্টিক সেন্টার নতুন লাইসেন্স বা লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেনি। সরকারের বেঁধে দেয়া সময় চলে গেলেও তারা এখনো কিভাবে ব্যবসা করছে তা দেখারও কেউ নেই। গতকাল হাইকোর্ট সারাদেশে ১২ হাজার ৫৪৩টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে বলে জানা পারলেও কতগুলোর লাইসেন্স নেই তা জানতে পারেনি। কারণ স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিকট সে তথ্য নেই।
খবরে বলা হয়েছে, লাইসেন্স নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে আবেদন করেছে দেশের ১২ হাজার ৫৪৩টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। কতটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই, সে তথ্য নেই অধিদফতরের কাছে। তবে লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অভিযান অব্যাহত আছে।
এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিতে বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চকে এমন তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মো. ফরিদ হোসেন মিয়ার দেয়া এ তথ্য আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত।
মানবাধিকার সংগঠন ‘চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’র পরিচালক ইশরাত হাসানের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে এদিন এমন তথ্য জানানো হয়।
গত ৩১ আগস্ট এক আদেশে সারাদেশে বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে কতটির লাইসেন্স আছে এবং কতটির লাইসেন্স নেই— সে তথ্য জানতে চান হাইকোর্ট। এ কারণে সংশ্লিষ্ট আদালতে দায়িত্বরত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত অধিদফতরের কাছে এসব তথ্য জানতে চান। এরপর অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মো. ফরিদ হোসেন মিয়ার স্বাক্ষরে সংশ্লিষ্ট তথ্য জানানো হয় রাষ্ট্রপক্ষকে।
অমিত দাসগুপ্ত আদালতকে জানান, কোভিড এবং নন-কোভিড হাসপাতালের সংখ্যা ও নাম স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে রয়েছে। লাইসেন্সধারী বেসরকারি হাসপাতালের তালিকা সরকারের কাছে আছে। কিন্তু কতগুলোর লাইসেন্স নেই, তার কোনো তালিকা নেই। লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে সরকার কর্তৃক অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো অবহেলার ঘটনা ঘটলে সে সম্পর্কে প্রতিকার প্রার্থনা করে স্বাস্থ্য বাতায়নে অভিযোগ করা যায়। জনগণ যেকোনো সময় অভিযোগ করতে পারে।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে এদিন শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। এরপর আদালত রিট আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়ার আদেশ দেন।
রিট আবেদনে করোনা পরীক্ষা করা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা প্রকাশ, চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য সারাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম এবং সংখ্যা প্রকাশ, যেসব হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেসব হাসপাতাল মনিটরিংয়ে প্রত্যেক থানায় একটি করে কমিটি গঠন, রিজেন্ট থেকে ভুয়া করোনার সনদ দেয়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রকাশ, রিজেন্টের প্রতারণার শিকার প্রত্যেক রোগী থেকে নেয়া ফি ক্ষতিপূরণসহ (২৫ হাজার টাকা করে) ফেরত প্রদান, করোনার সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি সপ্তাহে তাদের সেবা নিয়ে পরিপূর্ণ একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সেজন্য একটি নীতিমালা করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
করোনার ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগে গত ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখা (উত্তরা ও মিরপুর) বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর গত ১৯ জুলাই এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু নোটিশের জবাব না পেয়ে রিট আবেদন করা হয়।