ঢাকা: ফের আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পান কিনা অথবা পেলে যাবেন কিনা তা নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল রাজনৈতিক অঙ্গনে। তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পরিবারের করা আবেদন এরইমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। গতকাল এ আবেদন পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি মানবজমিনকে বলেন, এইমাত্র আমার কাছে চিঠিটি এসেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর জানাবো।
গত ২৫শে মার্চ খালেদা জিয়া যখন মুক্ত হন তখন সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া শর্তানুযায়ী তার বিদেশ যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সূত্রে জানা গেছে, এবার আবেদনে ওই শর্ত শিথিল করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, চিকিৎসার জন্য মুক্তি পেলেও করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের হাসপাতালেও খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন এর আগে যুক্তরাজ্য এবং সৌদি আরবে চিকিৎসা নিয়েছেন। দীর্ঘদিন তার ফলোআপ চিকিৎসা হচ্ছে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সব সময় বলেছি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে, যে সাজা তার প্রাপ্য না। জামিনটা তার প্রাপ্য ছিল। আমরা আশা করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে। সরকারের পক্ষ থেকে সিগন্যাল পেলে বেগম জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চিকিৎসার বিষয়টা সম্পূর্ণ ম্যাডামের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত উনি নিজেই নিবেন। এটা নিয়ে দল বা আমি কিছুই জানি না। ম্যাডামের স্বাস্থ্যের বিষয়ে ওনার চিকিৎসকরা এবং পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনপত্রে বলা হয়, করোনাকালীন দুর্যোগে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়নি। পাশাপাশি তার সুচিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য শারীরিক অসুস্থতায় কোনো পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে যাওয়া অফিস-আদালতসহ গণপরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসতে শুরু করেছে। এতে অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও এ সংক্রান্ত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে বলা হয়, বয়স, শারীরিক অসুস্থতা ও মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির আবেদন করা হলো।
এদিকে গত শনিবার বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার আইনজীবী ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় অবস্থান করেন তিনি। মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ম্যাডামের শরীর ভালো না। উনি খুবই অসুস্থ। ওনার নী (হাঁটু) রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে। আড়াই বছর ধরে এটার কোনো চেকআপ হচ্ছে না। ওনার হাতের তিন আঙ্গুল প্রায় অসাড় হয়ে গেছে। বাম হাতও বেঁকে গেছে। ওনার হাই ডায়াবেটিস, হাই প্রেসার। এখন ওনার পরিপূর্ণ এবং উন্নত চিকিৎসা দরকার। স্বাস্থ্য নিয়ে ম্যাডাম নিজেই উদ্বিগ্ন।
সরকারের পক্ষ থেকে সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হলে চিকিৎসার জন্য বেগম জিয়া বিদেশ যাবেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ম্যাডাম তো দেশেই চিকিৎসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশের প্রায় হাসপাতালে তো এখন করোনা চিকিৎসা করা হচ্ছে। ওনার বয়স ৭৫ বছর। অনেক জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। এই অবস্থায় দেশের কোনো হাসপাতালে ওনার চিকিৎসা করাটা তো ঠিক হবে না। তাই ওনার চিকিৎসা এখন বিদেশেই প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর গত ২৫শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বর।