ঢাকা: করোনা সংক্রমণের লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। সরকারি হিসাব মতে, দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। শনাক্তের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। করোনা শনাক্তের ১৭১ দিনের মাথায় মৃত্যু ও শনাক্তের চিত্র এটি। দেশে ৮ই মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। আর প্রথম মৃত্যুর সংবাদটি আসে ১৮ই মার্চ। ২০শে আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের হিসাব মতে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ইতিমধ্যে দেশে দুই হাজার ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রথম থেকেই করোনার থাবা ঢাকাতে। হটস্পট ছিল রাজধানী।
দিনে দিনে সারা দেশে ছড়ালেও রাজধানীতেই অর্ধেকের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো শিথিল হওয়ায় রাজধানীতে আবার সংক্রমণ বাড়ছে। গত এক মাসে রাজধানীতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। এই তথ্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর। আইইডিসিআরের হিসাবে পুরো রাজধানীতেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। প্রায় সব এলাকায় নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, উত্তরায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় আরো বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির অন্যতম সদস্য, দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, করোনার সংক্রমণের গতি আগের মতোই আছে। আমাদের এখানে দ্বিতীয় ওয়েভ হয়নি। যেটা ইতালিতে হয়েছে। গতি কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখার জন্য আরো সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মাস্ক পরতে হবে। দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে হবে। হাঁচি, কাশি হলে রুমাল বা কুনই ব্যবহার করতে হবে।
ঢাকা সিটিতে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৫২ হাজার ১৯৯ জন। যা মোট শনাক্তের ৫০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। দেশে মোট ৪ হাজার ২৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে রাজধানীতেই মারা গেছেন ৮৭৩ জন। দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৮ জন। বিভাগগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা এক লাখ ৯১ হাজার ৩১৪ জন। যা মোট শনাক্তের ৬৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২ হাজার ৫৪৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ সময় ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতেই এক হাজার ১৯৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত করোনায় রাজধানী ছাড়া ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ১১৫ জন। এই বিভাগে মোট মারা গেছেন (ঢাকা সিটি ও অন্যান্য জেলাসহ) এক হাজার ৯০২ জন। ময়মনসিংহ বিভাগে মোট ৫ হাজার ৬২৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ বিভাগে মারা গেছেন ৮৮ জন। এখন পর্যন্ত ৪১ হাজার ৩৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগে ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯১৫ জন। রাজশাহী বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছেন মোট ১৭ হাজার ২৫ জন। বিভাগটিতে মারা গেছেন ২৭৩ জন। রংপুর বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৫৬৭ জন। এ বিভাগে মারা গেছেন ১৭২ জন। খুলনা বিভাগে মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৫৯৪ জন। এ বিভাগে মারা গেছেন ৩৩১ জন। বরিশাল বিভাগে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা মোট ৭ হাজার ২৮০ জন। এ বিভাগে মারা গেছেন ১৬৩ জন। সিলেট বিভাগে ৯ হাজার ৮৯৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ বিভাগে মারা গেছেন ১৮৪ জন।
এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪৫ জন। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ২৮ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল নতুন করে ২ হাজার ৫৪৫ জন শনাক্ত এবং এ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৮৮১ জন এবং এখন পর্যন্ত এক লাখ ৮৬ হাজার ৭৫৬ জন সুস্থ হয়েছেন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ৯১টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৭৮৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৪ হাজার ১৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ৭০ হাজার ১৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং ১৩ জন নারী। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১৬৯ জন পুরুষ এবং ৮৫৯ জন নারী মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের উপরে ২৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে ২৫ জন, চট্টগ্রামে ৯ জন, রাজশাহীতে ২ জন, খুলনায় ৪ জন, বরিশালে ২ জন, রংপুরে ১ একজন এবং ময়মনসিংহে ২ জন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৪৪ এবং বাসায় একজন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮০৬ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২০ হাজার ৩৭৫ জন। আইসোলেশন থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৭১৮ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৬৫৮ জন ছাড়া পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৩৩ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ২৪২ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ২০৮ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩২ হাজার ৪০২ জন ছাড়া পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৩ জনকে। এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২ হাজার ৭৬১ জন। ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রান্ত ফোনকল এসেছে ৫৩ হাজার ৫২৬টি এবং এ পর্যন্ত মোট কল সংখ্যা এক কোটি ৯৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৪টি। সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে ১৫ হাজার ৩৯১টি শয্যার মধ্যে বর্তমানে ১০ হাজার ৯৯০টি সিট ফাঁকা রয়েছে। ঢাকা মহানগরে ৬ হাজার ৯৩৫টি মধ্যে ফাঁকা আছে ৪ হাজার ৫৪৭টি।