বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করলে বর্তমান সরকারের ‘রাজনৈতিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।
রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন সরকার মনে করছে বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করলেই বোধহয় ২০ দলের আন্দোলনে ভাটা পড়বে, কিন্তু তারা ভুলে গেছে কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারের পরও আন্দোলনকারীরা যখন হরতাল অবরোধে অগ্রগামী তখন বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের পরিণতি হবে বর্তমান অবৈধ সরকারের জন্য রাজনৈতিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।
বিবৃতিতে রিজভী বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের প্রধান থেকে শুরু করে অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ও শাসকদলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য বিবৃতি শুনলে মনে হয় কে কতো নিম্নরুচির ভাষা প্রয়োগ করতে পারে সেটারই প্রতিযোগিতা করছেন তারা।
মহান জাতীয় সংসদকে যেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কার্যালয় কিংবা আওয়ামী মহাজোট সরকারের কাব ঘরে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে গানবাজনা থেকে শুরু করে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে গালিগালাজ এবং বর্তমান চলমান আন্দোলন দমানোর হুমকি-ধামকির প্রতিযোগিতা চলছে।
রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার ও বিচার করার জন্য তারা চিৎকার শুরু করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাই শেখ সেলিম বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে নাকি প্রকাশ্যে রাস্তায় ধরে এনে বিচার করা হবে। শেখ সেলিমের এ ধরণের বক্তব্য কেবল শেখ হাসিনাকে খুশি করা। কারণ এই শেখ সেলিমই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছিলেন। নিজের অপরাধ ঢাকা দেয়ার জন্যই বোনকে খুশি করতে এখন বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে গলাছেড়ে গালিগালাজ করছেন।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তা ও বিএনপির অস্তিত্ব প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র জ্বালা। সেটি বুঝতে পেরেই শেখ সেলিম দিনরাত বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে অশ্রাব্য চিৎকার করে যাচ্ছেন। তবে বড় কোনো বিপদ ঘটে গেলে শেখ সেলিম যে শেখ হাসিনারও বিচার চাইবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করতে আইনী প্রক্রিয়া দেখা হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, এখন একদলীয় রাষ্ট্র, একদলীয় জাতীয় সংসদ, একদলীয় নির্বাচন, একদলীয় জনপ্রশাসন এবং একদলীয় বিচার ব্যবস্থা বিরাজমান। সুতরাং সমগ্র রাষ্ট্রটিকেই আওয়ামীকরণ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় আইনী প্রক্রিয়ার অর্থ হচ্ছে-প্রধানমন্ত্রীর জারিকৃত ফরমানের ধারাবাহিক বাস্তবায়ন। কিন্তু জনগণও যে বিচারক আওয়ামী লীগ যেন সেটা ভুলে না যায়। আওয়ামী নেতারা ভুলে গেছেন যে দেশের মালিক জনগণ, কোনো ভোটারবিহীন সরকার বা সংসদ নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী শাসন আর মরণের বার্তা যেন সমার্থক। জনগণের কণ্ঠনালী কেটে গণতন্ত্রকে কবরস্থ করার ঐতিহ্য এদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগেরই। সেজন্য নতুন রূপে নয়, আসল রূপেই বাকশালকে চূড়ান্ত রূপে দাঁড় করানো হয়েছে। আর এজন্যই বেগম জিয়াকে বন্দী করার নানা ফন্দি আঁটা থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকে শুধুমাত্র সরকারের সকল বার্তা প্রচারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর বাকস্বাধীনতার আইনগত অধিকারকে তো আগেই শূলে চড়ানো হয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের নীতিনির্ধারকরা আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের বুকে গুলি করতে বলেছেন। গোয়েন্দা পুলিশরা বন্দুকযুদ্ধের গল্প বানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাহবা পাচ্ছেন। আন্দোলন ঠেকাতে প্রতিরোধ কমিটির নামে বেসামাল সশস্ত্র ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীদের লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতকিছুর পরেও মৃত্যুতোরণ দুয়ারে দুয়ারে গণতন্ত্র ও স্বাধীন জীবনের জয়গান গাইতে গাইতে আন্দোলনরত নেতাকর্মীরা অবরোধ-হরতালে নির্ভীক অগ্রবাহিনী হিসেবে অংশগ্রহণ করছেন।