স্বাস্থ্যবান গাজীপুর-১৩: যেই লাউ সেই কদু!

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি


গাজীপুর: লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেই হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানই অধিকাংশ। এখন যদি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেই বৈধ হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়, তাহলে নবায়নের তেমন কোন প্রয়োজন আছে কি? তাহলে তো আবেদন করেই হাসপাতাল চালানো সম্ভব, যা চলছে বছরের পর বছর। মানে হলো যেই লাউ সেই কদু!

গাজীপুর জেলা, মহানগর ও সকল উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারী হাসপাতাল ডায়গনষ্টিক ও ক্লিনিকগুলোর সমন্বিত বা আলাদা আলাদা সংগঠন রয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিসকে কেন্দ্র করে এই সব সংগঠন যে সিন্ডিকেট করেছে, তা ভাঙতে না পারলে এই খাতে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ এই সিন্ডিকেট আবেদন করে হাসপাতাল চালানোর কাজটি ভালো করে করে থাকে। যাতে পূর্নাঙ্গ লাইসেন্স বা নবায়নের প্রয়োজন জরুরী হয় না। হাসপাতাল মালিকদের সংগঠনের অনেক নেতার হাসপাতালেই লাইসেন্স আপডেট নেই। তাই বৈধভাবে স্বাস্থ্যখাতকে পরিচালিত করতে হলে সকল সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।

সরেজমিন জানা যায়, গাজীপুর জেলায় চার শতাধিক বেসরকারী চিকিৎসালয় রয়েছে। কিন্তু কতগুলোর লাইসেন্স আছে তা জানা সম্ভব হয়নি। সিভিল সার্জন অফিসও সঠিক সংখ্যা দিতে পারেনি। এই অবস্থায় গতকাল সরকার ঘোষিত সময় শেষ হয়েছে। সরকার বলছে, গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত যারা আবেদন করতে পারেননি, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি তাই হয়, তবে এই হুসিয়ারী দিয়ে কি লাভ হল! কারণ আবেদন করে হাসপাতাল পরিচালনা করা গেলে আর লাইসেন্সের দরকার কি? এই ভাবেই তো চলছিল হাসপাতালগুলো। তাহলে কি যেই লাউ সেই কদু! যা হউক, এখন প্রশ্ন হল, গাজীপুর জেলায় কতগুলো বেসরকারী চিকিৎসালয় লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন আর কারা করেননি, সেই তালিকা পাওয়া যায় কি না।

এদিকে খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসমূহের মধ্যে যাদের নিবন্ধন নেই, অথবা লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি, তাদের নিবন্ধন এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মেয়াদ শেষ হয় রোববার ২৩শে অগাস্ট।

গতকাল শেষ দিন পর্যন্ত মোট ১৭ হাজারের মত বেসরকারী চিকিৎসালয়ের মধ্যে ১২ হাজার ১৪৬টি বেসরকারী হাসপাতাল অনলাইনে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। আর লাইসেন্স নবায়ন করা ছিল ৪ হাজার ৫১৯টির।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রোববার রাত ১২টার মধ্যে যারা নিবন্ধন ও লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়ায় আবেদন সম্পন্ন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক ডা ফরিদ হোসেন মিয়া বলেছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন বা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে নানা ধরণের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তখন দেখা যায়, করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালেরও লাইসেন্স নাই। তখন সরকার এক মাস সময় দিয়ে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নিবন্ধন এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য সময় বেধে দেয়।

ডা ফরিদ হোসেন মিয়া বলেছেন, “যাদের আদৌ লাইসেন্স নেই, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে, অর্থাৎ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। পাশাপাশি যাদের লাইসেন্স আছে, কিন্তু নবায়ন করেনি তাদের প্রয়োজনে কিছুটা সময় দেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা আবেদন করলেই একমাত্র সেটি সম্ভব।”

তিনি জানিয়েছেন, রোববারের মাঝরাতের মধ্যে কতগুলো হাসপাতাল লাইসেন্স নবায়ন বা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেনি, তা বোঝা যাবে। কিন্তু এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।

“এরপরই নির্ধারণ করা হবে, কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে।”

২০১৮ সাল থেকে ম্যানুয়ালি লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া থেকে সরকার অনলাইনে লাইসেন্স দেয়া শুরু করে।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাড়ে ১৭ হাজার ২৪৪টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজারের মত প্রতিষ্ঠান ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *