প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ যে, তিনি গণতন্ত্র নিয়ে বেপরোয়া (fast and loose) খেলা খেলছেন। অন্যদিকে গণতন্ত্রের প্রতি বিরোধী দল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার আন্তরিকতা নিয়ে অনেক বিশ্লেষকের প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, তিনি এখন যে কৌশল নিয়েছেন তাতে হয়তো তিনি আশা করে থাকতে পারেন যে, সেনাবাহিনী আবারও হস্তক্ষেপ করবে এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করবে। কিন্তু এমনটি ঘটার কোন ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। বাংলাদেশে পরিস্থিতি এতটাই ঘোলাটে যে, পশ্চিমা দাতারা যে কোন রকম অবরোধ আরোপ করা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে। বাংলাদেশে একটানা রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি সত্ত্বেও অর্থনীতি উল্লেখ করার মতো ভাল পারমরমেন্স দেখাচ্ছে। এখনও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে এমন কোন তথ্য-প্রমাণ নেই যুক্তরাজ্যের কাছে। বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্সের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ২১শে জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে প্রকাশিত ৫ পৃষ্ঠার ওই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সার্বিক চিত্র। এতে বলা হয়, দু’বছর সেনা সমর্থিত সরকারের কাছ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বেসামরিক ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। ওই নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ। এর ফলে আশার সঞ্চার হয়েছিল যে, বাংলাদেশ তার রাজনৈতিক অতীত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু ‘দুই বেগম’ নামে পরিচিত শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে বিবাদে সেই সুযোগ নষ্ট হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দক্ষতার ক্ষেত্রে যে অবস্থানই নেয়া হোক না কেন তা দুই নেত্রীর মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে গেছে- এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই বললেই চলে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগের মতোই সংঘাতময় রয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতি। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নতুন নির্বাচন দাবি করছে। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল তারা। তবে ওই নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। তাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণ, খালেদা জিয়া চাইছিলেন ২০১৪ সালের নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। কিন্তু তার পরিবর্তে শেখ হাসিনা গঠন করেন সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা। সম্প্রতি এই ‘দুই বেগম’-এর মধ্যে বিরোধ তীব্র হয়ে ওঠে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথমবার্ষিকীতে ৫ই জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু সমাবেশ নিষিদ্ধ করে এর জবাব দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। তারপর থেকেই খালেদা জিয়া সড়ক, রেল ও পানিপথে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা করেন। এ কর্মসূচি শুরু হয় ৫ই জানুয়ারি। তারপর থেকে তা চলছেই। ১৬ই জানুয়ারি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে। আওয়ামী লীগ ১৭ ও ১৮ই জানুয়ারি দেশব্যাপী সন্ত্রাস বিরোধী কর্মসূচি ঘোষণা করে তার জবাব দেয়। এই বিক্ষোভে কমপক্ষে ১০জন নিহত হয়েছেন। বিএনপি’র এক নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৩রা থেকে ১৯শে জানুয়ারি নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় খালেদা জিয়াকে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, এটা করা হয়েছে তার নিরাপত্তা দিতে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও বিচারাধীন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবাধিকারে ভয়াবহ লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচার অব্যাহত রেখেছে বিতর্কিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। ওই রিপোর্টে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
২০১৪ সালের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় চরম ত্রুটিপূর্ণ একটি জাতীয় নির্বাচন। খালেদা জিয়ার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই নির্বাচন বর্জন করে। এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। সরকার দাবি করে, শতকরা ৪৮ ভাগ ভোট পড়েছে নির্বাচনে। কিন্তু অন্যরা বলেন, প্রকৃত ভোট এর চেয়ে অনেক কম। আওয়ামী লীগকে আগের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফিরে যেতে আহ্বান জানায় বিএনপি। আহ্বান জানায়, নির্বাচন তদারক করতে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার। তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগ গঠন করে সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার। তারা বিরোধী সব বড় রাজনৈতিক দলকে এই মন্ত্রিসভায় আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী তাতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হয় হরতাল ও তাতে বাড়তে থাকে সহিংসতা। এতে বেশকিছু মানুষ হতাহত হন। নির্বাচনের পরে বেশ কয়েক সপ্তাহ অব্যাহত থাকে অসন্তোষ। এ সময় বিরোধীদলীয় সমর্থকদের বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা-সহ কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের তীব্র সমালোচনা করে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনমানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি বলে পশ্চিমা দাতারা নির্বাচনের ফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। তারা রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করে নতুন একটি নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান। প্রথমদিকে নতুন নির্বাচন দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ২০১৪ সালে এ নিয়ে আলোচনা বাতিল করেছেন তিনি।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা
রাজনৈতিক অচলাবস্থা যখন অনিষ্পন্ন অবস্থায় তখন নির্বাচনের পরেও রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত থাকে। বিএনপি স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে এ নির্বাচন হয়। এতে প্রথম দু’দফায় বিএনপি ব্যাপক হারে বিজয় অর্জন করে। পরবর্তী ধাপে আওয়ামী লীগ থেকে পিছিয়ে পড়ে তারা। বিরোধী রাজনৈতিক দল এক্ষেত্রে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ আনে। ২০১৪ সালের মার্চে বিশেষ দুর্নীতি দমন আদালত খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করে। এতে রাজনৈতিক উত্তাপ আবার বাড়তে থাকে। খালেদা জিয়ার পুত্র ও তার রাজনৈতিক উত্তরসূরি, বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি বর্তমানে বসবাস করছেন লন্ডনে। প্রতিশোধ নিতে রাজপথে আন্দোলন শুরুর হুমকি দেন খালেদা। ২০১৪ সালের এপ্রিলে বিএনপি বলে যে, যদি খালেদা জিয়ার বিচার করা হয় তাহলে তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে আন্দোলন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছেন। সরকারের প্রতিনিধিরা যুদ্ধাপরাধের জন্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার কথা বলেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আরেক দফা বিরোধ শুরু হয় মে মাসে। এপ্রিলে র্যাব সাত জনকে হত্যা করে। এ নিয়েই ওই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। এ সময় র্যাব বিলুপ্তির দাবি জানায় বিএনপি। জবাবে আওয়ামী লীগ বলে যে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারই র্যাব’র কঠোর সমর্থক ছিল। ২০১৪ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়। সমালোচকরা এসব পদক্ষেপকে বাংলাদেশের মানবাধিকারকে সীমিত করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন। তারা সম্প্রচারের ক্ষেত্রে একটি আইন করে, যা অনেকের দৃষ্টিতে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের প্রতি হুমকি। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপন করে, যেখানে বিদেশী অর্থ সহায়তা পায় এমন সুশীল সমাজের গ্রুপকে জরিমানার কথা বলা হয়। এছাড়া জাতীয় সংসদের হাতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হয় একটি বিল পাসের মাধ্যমে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ১০০ সদস্যকে সহিংসতায় জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত করে। অক্টোবরে বাংলাদেশ সরকারকে ভারত জানায় যে, তারা শেখ হাসিনাকে হত্যা ও তার সরকারকে উৎখাতের একটি ষড়যন্ত্র উন্মোচন করেছে।
নতুন করে আন্দোলন
গত বছরের শেষ চতুর্ভাগে এসে রাজপথের আন্দোলন ফের উত্তেজিত হয়ে ওঠে। খালেদা জিয়া ৫ই জানুয়ারিকে বিতর্কিত নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি হিসেবে পালনের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেন। কিন্তু জনসভা ওইদিন নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা বিরোধী দলের নতুন নির্বাচনের দাবি জোরালো করেছে। তারা অনির্দিষ্টকালের সড়ক, রেল ও পানিপথ অবরোধ ঘোষণা করে। ৫ই জানুয়ারি ঢাকা ও ছোটখাট শহরগুলোতে বিক্ষোভ হয়েছে। অন্যদিকে সরকার দমন-পীড়ন চালিয়েছে। এতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। বিরোধী অন্য অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানকে গুলি করে আহত করা হয়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কণ্ঠরোধের একটি নির্দেশ জারি করা হয়। মিডিয়ায় তার কোন বিবৃতি প্রকাশ নিষিদ্ধ করা হয়। তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের পর পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো বেসরকারি টেলিভিশন একুশে টিভি’র চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৪ই জানুয়ারি বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন সব দলকে সংযত হয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের আহ্বান জানান।
বিরোধী রাজনীতিক ও সমালোচকদের বিচার
খালেদা জিয়ার মামলার শেষ আইনি চ্যালেঞ্জ কার্যত শেষ হয় নভেম্বরে। অভ্যন্তরীণভাবে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মামলা পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে এবং গত বছর ধরে রায় দিয়ে যায়। বিএনপি ও জামায়াতের অভিযোগ, এই আদালত রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই আদালত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো ও বিভিন্ন ভাষ্যকার। বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরা এ আদালতের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানের করতে আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এসব আহ্বানে কর্ণপাত করা হয় নি। ডিসেম্বরে বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে তার অনুপস্থিতিতে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। তাকে দেয়া হয় প্রতীকী শাস্তি। এর সঙ্গে করা হয় জরিমানা। এই আদালত অন্য মিডিয়া ও সুশীল সমাজকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করেছে। এতে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপরে একটি প্রভাব সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক চৌধুরী মইন উদ্দিনকে তার অনুপস্থিতিতে দেয়া হয়েছে মৃত্যুদ-। তারেক রহমানকে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের ভিতরে বিভিন্নজনের আহ্বান রয়েছে। একই সময়ে ২০০৯ সালের ২ দিনের এক বিদ্রোহের কারণে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫২ সদস্যকে শাস্তি হিসেবে দেয়া হয় মৃত্যুদ-। গত বছর জানুয়ারিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয় চট্টগ্রামে অস্ত্র মামলায়। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাকে অক্টোবরে মৃত্যুদ- দেন। তবে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদ-ের শাস্তি গত সেপ্টেম্বরে লঘু করেন সুপ্রিম কোর্ট। তাকে এ শাস্তি দেয়া হয়েছিল ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তিনি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্ত। নভেম্বরে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর আরেক নেতা মীর কাশেম আলীকে।
যুক্তরাজ্যের অবস্থান
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রথম রায়ের বিষয়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে প্রতিক্রিয়া দেন ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ারসি। ওই রায়ে অভিযুক্তকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল। ওয়ারসি বলেছেন, বৃটিশ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সমর্থন করে। কিন্তু নীতিগতভাবে কঠোরভাবে মৃত্যুদ-ের বিরোধী। তিনি আরও আশা করেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলো যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আইনজীবীরা যে প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন তার দিকে অপরাধ আদালত দৃষ্টি দেবে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কিছুটা দ্বিধা। এক্সট্রাডিশন অ্যাক্ট ২০০৩ এর অধীনে বাংলাদেশ হলো ‘পার্ট ২ দেশ’ এর তালিকায়। এর অধীনে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে বন্দিবিনিময় হতে পারে। এর অর্থ হলো যুক্তরাজ্যের কাছে বাংলাদেশ বন্দিবিনিময়ের অনুরোধ করতে পারে। কিন্তু যুক্তরাজ্য প্রকৃতপক্ষেই বন্দি হস্তান্তর করবে কিনা সে বিষয়টি অত্যাবশ্যক নয়। যেসব ব্যক্তিকে মৃত্যুদ- দেয়া হতে পারে, দেয়া হবে অথবা দেয়া হয়েছে, এমন ব্যক্তিকে হস্তান্তর করে না যুক্তরাজ্য। যদি নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, তাদেরকে মৃত্যুদ- দেয়া হবে না তাহলেই হয়তো বন্দিবিনিময় করতে পারে যুক্তরাজ্য। চৌধুরী মঈন উদ্দিনকে হস্তান্তর করার কোন অনুরোধ যুক্তরাজ্য পেয়েছে কিনা তা জানা যায় নি। তারেক রহমানকে হস্তান্তরের জন্য আনুষ্ঠানিক এমন অনুরোধের বিষয়ে কোন তথ্য প্রমাণও নেই।