আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শুধু খোন্দকার মোশ্তাক ও কয়েকজন সেনা অফিসারই জড়িত ছিলেন না বরং বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্রের ফলাফলই ছিল ১৫ই আগস্টের সে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তান, লিবিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও জড়িত ছিল। বুধবার রাতে প্রচারিত ওয়েবিনারের বিষয়বস্তু ছিল ’৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশ : বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন’। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের সহযোগিতায় এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই ওয়েবিনারের অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ শাহরিয়ার আলম এমপি, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসান, কলামিস্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা সুভাষ সিংহ রায়, অস্ট্রেলীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর শামস রহমান এবং লেখক ও গবেষক হাসান মোরশেদ। মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে কখনো সফল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দাবি করতে পারবো না, যতদিন পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেষ খুনিকে আইনের আওতায় আনতে না পারবো। এটা যে কত বড় গ্লানি জাতি হিসেবে, তার চেয়ে বড় গ্লানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সুভাষ সিংহ রায় বলেন, ৯ই এপ্রিল ১৯৭৯ সালে পার্লামেন্টে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেছিল। এরপরে ১৯৯৬ সালে জনগণের সরকার আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন সংসদে এই আইন নিয়ে সরকারের আইনমন্ত্রী ইনডেমনিটি আইন বিলটি পেশ করেছিল তখন বিএনপি সংসদে ওয়াক আউট করেছিল।
তিনি বলেন, ইনডেমনিটি দেয়ার যে বজ্জাত অভ্যাস এটা বিএনপি’র জন্মলগ্ন থেকেই। তিনি বলেন, আমার বলতে কষ্ট হয় জিয়াউর রহমান তার সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে ১৫ই আগস্টকে নাজাত দিবস পালন করতে উৎসাহ দিতো। এমনকি তার স্ত্রী বেগম জিয়ার ভুয়া জন্মদিন ১৫ই আগস্ট পালনের নামে যা চলছে তা ন্যক্কারজনক। সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৫ই আগস্টের ঘটনাটি জানতো বলে অনেকে মনে করেন। তখন অ্যাম্বাসিতে ফিলিপ চেরীর সঙ্গে খুনি চক্র কয়েকবার দেখা করেছেন। ফারুক রহমান গাদ্দাফির সঙ্গে দেখা করেছিল। ১৯৭৩ সালেই তার পরিকল্পনা ছিল একটা কিছু ঘটাবে। তারা লিবিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। লিবিয়ার কানেকশনটা বজায় রেখেছে। প্রফেসর শামস রহমান বলেন, জিয়া ১৫ই আগস্টের মূল ষড়যন্ত্রকারীদের একজন ছিলেন। হাসান মোর্শেদ বলেন, ১৯৭৫’র ১৫ই আগস্ট থেকে নভেম্বর ৩ তারিখ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর খুনি সামরিক অফিসাররা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ১ সপ্তাহের মধ্যে জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান করে সামরিক গোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা দেশ থেকে চলে যেতে চায় যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের আশ্রয় না দিলে তারা ব্যাংকক হয়ে লিবিয়া চলে যায়। তিনি বলেন, ১৯৮৭ সালের আগস্টের ৩ তারিখ ফ্রিডম পার্টি নামের একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। এই দলের প্রধান হলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল সৈয়দ ফারুক, সঙ্গে বজলুল হুদা, রশিদ এরা ছিল। এরশাদ এই খুনিদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে দল গঠনের সুযোগ দেন। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুলের একটি বক্তব্যের জবাবে শামস রহমান বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী সময় থেকে ইতিহাস যেভাবে বিকৃত হয়ে আসছে এবং যারা এই বিকৃতির সঙ্গে জড়িত তাদের মুখ থেকে এই ধরনের কথা শোনাটা সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি। আমার মনে হয় তিনি কোনোরকম তথ্য-উপাত্ত জানেন না বা জানার চেষ্টা করেন না বলেই তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যায় জিয়া জড়িতকে এড়িয়ে গেছেন।