সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলে করোনা আক্রান্তের ভয়ে অনেক ধুমপায়ী ধুমপান ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কেউ কমিয়ে দিয়েছেন ধুমপান গ্রহণ করা। করোনা মহামারির সময়ে এই মরণব্যাধি থেকে বাঁচতে টাঙ্গাইলে ধূমপানের প্রভাব বা ব্যবহার কিছুটা কমেছে।
করোনার আগে অনেক ধূমপায়ীর দিনে যেখানে এক থেকে দুই প্যাকেট সিগারেট লাগতো এখন তারা ৬-৭ টাতেই দিন পার করছেন। এমনকি যারা আগে ৬-৯ টি সিগারেট সেবন করতেন এখন তারা ২-৩ টিতে ধূমপান করেও নেশা নিবারণ করছেন। এছাড়াও কিছু ধুমপায়ী করোনা আতঙ্কে ইতোমধ্যেই ধুমপান ছেড়ে দিয়েছেন। এছাড়া অনেকেই ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি ভাবছেন। বিগত দুই সপ্তাহে টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১০০ জন ধূমপায়ীর সঙ্গে সাক্ষাতে কিংবা মোবাইল ফোনে জেলার বিভিন্ন শ্রেণির ধুমপায়ী মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেসরকারি এক জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে, “এরমধ্যে ৩৫ জন ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন, ৫০ জন ধূমপান কমিয়ে দিয়েছেন (এদের মধ্যে ১৮ জন ভবিষ্যতে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন), বাকী ১৫ জন আগের মত ধূমপান করেছেন (এদের মধ্যে ১০ জন করোনায় আক্রান্তের ভয়ে সিগারেটের পুরো প্যাকেট ক্রয় করে ধূমপান করছেন)।”
টাঙ্গাইল শহরে মাছের ব্যবসা করেন টুটুল মিয়া করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা বিবেচনায় ইতিমধ্যেই সিগারেট সেবন অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন।
ধূমপান কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় দেখেছি ধূমপায়ীদের করোনা ভাইরাস বেশি আক্রমণ করছে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি ধূমপায়ী হলে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও নাকি অনেক কম। এজন্য করোনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আমি বর্তমানে সিগারেট সেবন একেবারে কমিয়ে দিয়েছি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে সিগারেট একেবারে ছেড়ে দেব।’
একই কথা বলেছেন ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আগে এক সময় দিনে কমপক্ষে ২-৩ প্যাকেট সিগারেট লাগতো। তবে এখন করোনার কারণে দিনে মাত্র ৩ টি সিগারেট সেবন করি।’
অনেকেই ইতোমধ্যেই ধূমপান ছেড়েও দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার জারিফ, কাঁচামালের ব্যবসায়ী আলীম।
তারা বলেন, ‘ধূমপান আসলে মানুষের ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকার করে না। শুনেছি ধূমপানের কারণে করোনায় আক্রান্ত অনেক মানুষ মারা গেছে। তাই ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি।’
ঠিকাদার মাইন হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও ধূমপান কমাতে পারছি না। তবে আগে যখন সিগারেট সেবনের প্রয়োজন হতো তখন দোকানে গিয়ে ১-২ টি সিগারেট ক্রয় করে সেবন করতাম। তবে এখন পুরো সিগারেটের প্যাকেট ক্রয় করি। পাবলিক প্লেসে কিংবা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এখন আর সিগারেট সেবন করি না। এছাড়া সিগারেট সেবনের আগে হাতে জীবাণু থাকার ভয়ে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধৌত করে সেবন করি।”
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘করোনা ভাইরাস ধূমপায়ীদের জন্য কত মারাত্মক যারা আক্রান্ত হয়েছেন কেবল তারাই বুঝতে পারেন। তাই আমি নিজে ধূমপান ছেড়েছি এবং আমার বন্ধু-বান্ধবদেরকে ধূমপান ছেড়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করছি।’