মোঃ ইসমাঈল হোসেন (মাস্টার ): প্রাকৃতিক দূর্যোগ খরা ও বন্যা কৃষকের জীবনের অবিচ্ছেদ্দ অংশ । এবারের বন্যার স্থায়িত্ব দীর্ঘ হওয়াই কৃষককে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বন্যায় সবচেয়ে অসুবিধা গবাদিপশুর বাসস্থান নিয়ে। গোয়ালঘর সহ বসত ভিটাই পানি উঠাতে গোখাদ্যের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।পশুর অসুখ বিসুখ বেড়ে গিয়েছে । মানুষ এবং পশুকে একই ঘরে বসবাস করতে হচ্ছে। বন্যায় কৃষকের ফসল ও বীজতলা নষ্ট হয়ে গিয়েছে ।
বন্যা পরবর্তী করণীয়:
যে বছর বন্যার প্রকোপ বেশি হয় সে বছর শীতকালীন ফসলের ফলন ভালো হয়। এর কারণ হলো বন্যায় হিমালয় থেকে আসা পলিতে ফসলের বিভিন্ন প্রকার খাদ্যোপাদান থাকে। বন্যায় যেসব জমির ফসল নষ্ট হয়েছে সেসব জমিতে সঠিক সময়ে রবিশস্য জাতীয় ফসল চাষ করতে পারলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে। তার জন্য প্রয়োজন সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন।
ইতিমধ্যে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে আগস্ট মাসের পর বড় বন্যার প্রকোপ দেখা না গেলে এরূপ ক্ষেত্রে আমন ধান নষ্ট হলেও ধান চারার সংস্থান করা গেলে পুনরায় স্বল্পমেয়াদি আমন ধান যেমন- বিইউ ধান-১, ব্রি ধান৫৬, বিনা ধান৭ চাষ করা যেতে পারে। কৃষক পর্যায়েও ধানের চারা ভাসমান পদ্ধতি বা দাপোগ পদ্ধতিতে উৎপাদন সম্ভব এজন্য দরকার সরকারি সহযোগিতা। তবে কোনোভাবেই যেসব জমি থেকে বন্যার পানি সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও সরে না যায়, সেসব জমিতে আমন ধান লাগানো ঠিক হবে না। কারণ এতে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যাবে এবং ওই জমিতে রবিশস্য সঠিক সময়ে চাষ করা যাবে না। কিন্তু যেসব জমির বন্যার পানি সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের আগেই নেমে যাবে, সেসব জমিতে দ্বিতীয়বার চারা রোপণ উঁচু জমির ধানের কুশি উঠিয়ে প্রতি গোছায় ২-৩টি কুশি রোপণ করা যেতে পারে। যদি কুশির বয়স ১০-১২ দিনের মধ্যে হয় তা হলে মূল গোছার তেমন ক্ষতি হবে না। লক্ষ রাখতে হবে যে মূল জমির ধানের যে গোছায় কমপক্ষে ৬-৭টি কুশি আছে সেখান থেকে ২টি কুশি তোলা যেতে পারে। এসব কুশি লাগানো গেলে তা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে নতুন কুশির জন্ম দেবে এবং কৃষক কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। যদি বন্যার পানি সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পরও স্থায়ী হয় তা হলে এসব জমিতে কোনোক্রমেই আমন ধান লাগানো ঠিক হবে না। বরং অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য গরুর ঘাস হিসেবে মাসকলাই কিংবা পাতা জাতীয় স্বল্পমেয়াদি জাতের সবজি চাষ করা যেতে পারে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জমি অবশ্যই সঠিক সময়ে অর্থাৎ নভেম্বর মাসের প্রথমেই রবি ফসল যেমন গম, ভুট্টা, আলু, ডালজাতীয় ফসল এবং শীতকালীন সবজি ইত্যাদি চাষ করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। অন্যদিকে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর গবাদিপশুর রোগবালাই বেড়ে যায়। রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ নজর দিতে হবে।
আগামী রবি ফসলের বাম্পার ফলন না হলে কৃষকের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। কাজেই এখনই কৃষককে রবি ফসল বিশেষ করে গম, ভুট্টা, আলু ও ডালের উন্নত চাষাবাদের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কৃষককে বীজসহ কৃষি উপকরণ আগাম সরবরাহ করতে হবে। চর এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষককে কৃষি উপকরণের ওপর যথেষ্ট পরিমাণ ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষির ওপর ভর্তুকি হলো সরকারের প্রকৃত কৃষি বিনিয়োগ। অনেক সময়ই সরকারের কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা দুর্গমে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। ফলে নতুন প্রযুক্তি থেকে প্রান্তিক কৃষক বঞ্চিত হয় বা বিলম্বে তা জানতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, প্রান্তিক কৃষক কৃষিকাজ করতে নিরুৎসাহিত হলে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য তা হবে এক মারাত্মক হুমকি। কারণ উঁচু ও ভালো কৃষি জমি প্রতি বছর প্রায় ০. ৬০ শতাংশ হারে কমে যাচ্ছে।
যেহেতু নিচু এলাকায় প্রতি বছরই বন্যা দেখা দেয় এবং ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে সেহেতু নিচু এলাকার কৃষি ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ কৃষি প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত। এবং আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সরকারকে এখনই বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।