ঢাকা: ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার উত্তরার বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ভয়ে আজ জাতির কণ্ঠ রুদ্ধ। বিএনপি শুরু থেকেই বলে এসেছে এই আইন সংবিধান বিরোধী এবং এটা আইন জনগনের কন্ঠরোধ করার জন্য সরকারের হাতিয়ার। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই আইন করেছে। আমরা মনে করি, অবিলম্বে এই আইনটি বাতিল করা উচিত এবং জনগনের চিন্তা-ভাবনা, তার স্বাধীনতার প্রকাশকে নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫৩ জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন, সরকারি দলের লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বললে, রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে, সরকারের সমালোচনা করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হচ্ছে। এমনকি যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদের কোনো দুর্নীতি কথা, তাদের কোনো বিবেক বর্জিত কীর্তিকলাপের কথাও যদি সোশ্যাল মিডিয়াতে অথবা প্রিন্টিং মিডিয়াতে প্রকাশ করে তাহলে সেই সাংবাদিক বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন যে, সাংবাদিকসহ সবাই এটা (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) নিয়ে প্রচন্ড সমালোচনা করার পরেও ৯৪ শতাংশ মামলা হয়েছে এই বিতর্কিত ’৫৭ ধারায়। জারি হওয়ার দুই বছরের কম সময়ের মধ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিক্রিয়া বেশ লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠছেন।
এটাও মনে রাখা দরকার যে, এই আইন কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। দেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ প্রক্রিয়ারই একটা অংশ। যখনই কোনো সরকার কর্তৃত্ব পরায়ন হয়ে উঠে, স্বৈরাচারী হয়ে উঠে, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র পরিণত করতে চায় তখনই প্রথম যে আঘাত হানে সংবাদ প্রকাশ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর এবং একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াকে দমন করা। সেটাই এই সরকার অত্যন্ত পরিকর্পিতভাবে, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে, সচেতনতার সঙ্গে করে চলেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান ফখরুল।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে সমস্ত আইন মানুষের অধিকারকে খর্ব করে, যে সমস্ত আইন মানুষের স্বাধীনতার চেতনার যে বিষয়গুলো ছিলো বাক স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা সেগুলোকে খর্ব করে, হরণ করে। অবশ্যই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব যদি পাই কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা সেগুলোকে অবশ্যই বাতিল করবো।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে সরকারকে কোনো চিঠি দেবেন কিনা, কোনো কর্মসূচি নেবেন কিনা কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন যে, গত ৫ মাস ধরে কোভিড-১৯ এর কারণে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই কারণে এই মুহুর্তে এই ধরনের কোনো কর্মসূচি যেটা জনসমাবেশ থাকে সেটা আমরা আনিনি। তবে আপনি যেটা বলেছেন যে, সরকারকে চিঠি দেয়া, সরকারকে অবগত করানোর চেষ্টা করা- সেটা তো আমরা এর আগেও করেছি, এখনো আমরা করবো।
মানবাধিকার সংস্থাসমূহের তথ্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০২০ সালের ২২ জুন পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১০৮ টি। এই সব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪৪ জন, আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন। এই হিসেবে প্রায় ২৫ ভাগ আসামিই হলেন সাংবাদিক। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৯, মার্চে ১৩, এপ্রিলে ২৪, মে‘তে ৩১ এবং জুনের ২২ তারিখ পর্যন্ত ২১টি মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। গত বছর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৬৩টি, ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও আইসিটি অ্যাক্ট মিলিয়ে মামলা হয়েছে ৭১টি। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালে এক বছরে মোট মামলা হয়েছে ৬৩টি।