সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলে বন্যা পূর্ববর্তী সময়ে অবৈধভাবে ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে বিভিন্ন এলাকার নদীতে ব্রিজ সংলগ্ন জায়গায় বালু উত্তোলনের ফলে এবারের বন্যায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ব্রিজ। আর এভাবেই বিচ্ছিন্ন হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সম্পদ।
গত কয়েকদিনে টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার দাপনাজোর এলাকার ঝিনাই নদীর উপর নির্মিত ১২০ মিটার ব্রীজের মাঝখানের ৩০ মিটার স্ল্যাব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে টাঙ্গাইলের বাসাইল-কাঞ্চনপুর সড়কের ছনকাপাড়া এলাকায়ও সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বাসাইলের কাশিল ইউনিয়নের কামুটিয়া এলাকায় পানির উর্ধ্বগতি ও প্রচন্ত চাপে নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে চারটি ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। আর এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ।
এছাড়াও কয়েকটি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কয়েকটি ব্রিজ। সর্বশেষ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বড় বাসালিয়া ব্রীজের এপ্রোসটি মারাত্মকভাবে ধ্বসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বড় বাসালিয়া লৌহজং নদীর প্রবল স্রোতে ধ্বসে পরে ব্রিজটির পূর্ব দিকের অ্যাপ্রোচটি। আর এতে সদর উপজেলার বড় বাসালিয়ার এই ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধসে পরায় কুইজবাড়ী, গালাসহ কালিহাতীর এলেঙ্গা যাতায়াত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে এ সড়কে চলাচলরত অসংখ্য মানুষ।
এদিকে জানা যায়, “২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) টাঙ্গাইলের তত্ত্বাবধানে সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের বড় বাসালিয়ার লৌহজং নদীর উপর নির্মিত হয় ব্রিজটি। এটি সদর উপজেলার আঞ্চলিক সড়কের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রিজ। এটি উপজেলা সদরের মগড়া আর গালা
ইউনিয়নের অন্যতম সংযোগ স্থাপনের ব্রিজ। এছাড়াও এ ব্রিজের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত হয় কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায়।” স্থানীয়দের অভিযোগ, “বন্যায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক। সাধারন পানি বৃদ্ধি বা স্রোতে কারণেই যদি মাত্র দুই তিন বছর আগে নির্মিত এমন জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধসে যায় এমন কাজের প্রয়োজন কি? অফিস ম্যানেজ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামমাত্র ব্রিজটির অ্যাপ্রোচ নির্মাণের ফলে এ ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলেে ভোগান্ততিতে পরেছে এ অঞ্চলের মানুষ।”
মগড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আজহার মিয়া বলেন, “ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধসের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সরেজমিন পরিদর্শন করেছে।”
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) টাঙ্গাইল সদর উপজেলা প্রকৌশলী হেদায়েত উল্লাহ বলেন, “প্রবল পানি স্রোতের ফলে আর লিগেজ সৃষ্টির মাধ্যমে ব্রিজটির অ্যাপ্রোচ ধসে পরেছে। পরিদর্শন শেষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।”
টাঙ্গাইলের বন্যা কবলিত এলাকার সাধারণ মানুষসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, বন্যা পূর্ববর্তী সময়ে অবৈধভাবে ড্রেজিং ও ভেকু বসিয়ে ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বালু উত্তোলনের ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটছে। এভাবেই একের পর এক ভেঙে পড়ছে ব্রিজ। ব্রিজগুলো দ্রুত চলাচলের উপযোগি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।