গাজীপুর: প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র হিসেবে আছেন আওয়ামীলীগের আনিছূর রহমান। একাধারে চারবার তিনি মেয়র হয়েছেন। এই চারটি নির্বাচনেই আনিছুর রহমান আওয়ামীলীগের একটি পক্ষের লোক ছিলেন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রার্থী ঠিক থাকুক বা নাই থাকুক, একই ঘরে একাধিক প্রার্থী থাকায় নৌকা ঘর থেকে বের হচ্ছে না, এমন রাজনৈতিক গন্ধ আছে। মত ঠিক রেখে পথ পরিবর্তন করে হলেও নৌকা ঘর থেকে বের হচ্ছে না বলে গোপন সূত্রের খবর।
শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ ও সাবেক প্রয়াত সংসদ সদস্য এডভোকেট রহমত আলীর অনুসারীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর এই চেষ্টার শেষ ফলাফল হল, নৌকা যে পক্ষেরই হউক না কেন, আওয়ামীলীগের সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে থাকবেন এটাও নিশ্চিত।
দেশের বিশেষায়িত পৌরসভার মধ্যে একটি শ্রীপুর। নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, বর্তমান সরকার বিগত ২০০০সালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শ্রীপুরকে পৌরসভায় রুপান্তর হয়। এর পর সর্বশেষ তৃতীয় পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বিগত ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে এই পৌরসভায় নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী এই পৌরসভায় মোট ভোটার ৬৮হাজার ৪৭০জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৪ হাজার ১৯৯জন, মহিলা ৩৪ হাজার ২৭১জন। পৌরসভা গঠনের পর ৩টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সবকটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে একাধারে ১৮বছর ধরে এ পৌরসভায় নগরপিতার দায়িত্বে রয়েছেন গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান। এবারও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের কয়েকমাস বাকী থাকলেও আগাম প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। তারা একদিকে ভোটারদের মন জয় করতে যেমন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, তেমনি কেন্দ্র থেকে নিজ নিজ মনোনয়ন নিশ্চিতেও আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শ্রীপুর পৌরসভা ২০০০ সালে গঠনের পর থেকেই আওয়ামী প্রার্থী আনিছুর রহমান জয়ী হয়ে আসছেন। বিগত প্রতিটি নির্বাচনে আনিছের বিরুদ্ধে নিজ দলের তেমন শক্তিশালী কোন প্রতিদ্বন্ধী মাঠে সক্রিয় ছিল না। কিন্তু এবার নিজের দল থেকেই একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তাই সমীকরণ করতে হচ্ছে নতুনভাবে।
সরেজমিন জানা যায়, নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন শ্রীপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মন্ডল বুলবুল,গাজীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক আবুল খায়ের বিএসসি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা হারুনুর রশিদ ফরিদ। মেয়র পদে তরুন এক নতুন প্রার্থী গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন। মেয়র আনিছুর রহমান, জাহিদুল আলম রবিনের ফুফা হন। তাই দুই প্রার্থী এক বাড়ি থেকেই, তাও বলা যায়। এর মধ্যে আনিছ সব সময়ই সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজপন্থী। আর রবিন রহমত আলী পন্থী। এক বাড়ির দুই প্রার্থী দুই পন্থী হওয়ায় মিলের সম্ভাবনা অনেকটাই খুঁজছেন সাধারণ মানুষ। নৌকা নিজ ঘরে রাখতে তারা যে কোন সিদ্ধান্তও নিতে পারেন। এমনও শুনা যাযম আনিছুর রহমান প্রয়োজনে পথ পাল্টিয়ে রহমত আলী ব্লকে গিয়ে হলেও নৌকা ঠিক রাখতে পারেন। সম্ভব না হলে নিজের ঘরেই নৌকা যেন থাকে, সে ভাবনাও তার রয়েছে বলে সূত্রের দাবী।
এই নির্বাচনে নতুন আরেক প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা হারুনুর রশিদ ফরিদ। তিনি রহমত আলী সাহেবের ঘনিষ্ট লোক হিসেবে নৌকা চাইবেন বলে জানা গেছে। ফরিদ জানিয়েছেন, নৌকা প্রাপ্তীর ক্ষেত্রে তিনি শতভাগ আশাবাদী। এ ছাড়া আওয়ামীলীেগ থেকে যারা প্রার্থী তারা সকলেই সঙ্গত:কারণে নৌকা প্রাপ্তীর ক্ষেত্রে অনুরুপ আশাবাদী। তবে দলীয় মনোনায়ন ঘোষনার পূর্ব পর্যন্ত সকলেই নৌকা পাওয়ার ব্যপারে আশাবাদী থাকবেন এটাই স্বাভাবিক।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, নৌকার প্রার্থী হবে একক। কোন বিরোধ থাকবে না। নৌকার বিপরীতে কোন বিদ্রোহী প্রার্থী হবে না। যিনি মনোনায়ন পাবেন তার পক্ষে নৌকার সকলেই কাজ করবেন। তবে শ্রীপুর পৌর নির্বাচনে নৌকা কোন গ্রুপেই যাবে না। নৌকা আওয়ামীলীগের প্রতীক।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, এই সরকারের অধীন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার সম্ভাবনা কম।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিএনপি অংশ গ্রহন না করলে এবং আওয়ামীলীগের কোন গ্রুপ না হলে শ্রীপুর পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে সময় বলে দিবে, কে হবেন শ্রীপুর পৌর সভার আগামী দিনের পৌর পিতা।
ভোটারদের ভাষ্য অনুযায়ী,শিল্প কারখানার সৌজন্যে ব্যাপক রাজস্ব আয় হয় এ পৌরসভায়। অথচ পৌরসভায় এখনো নাগরিক সুবিদা নিশ্চিত হয়নি। বিশেষ করে পৌর এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই শোচনীয়। জলাবদ্ধতা,ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা,বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে জনভোগান্তি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সাধারন মানুষ নৌকার প্রার্থীকে বারবার জয়ী করলেও নাগরিকদের কথা ভাবেননি কেউ। ধাপে ধাপে পৌরসভা তৃতীয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হলেও প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার তেমন কোন উন্নয় নেই এখানে।