ভারতের রাজধানী দিল্লিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য গড়ে তোলা একটি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে এক কিশোরী ধর্ষিতা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই কিশোরী এবং দুই অভিযুক্ত – তিনজনেই কোভিড আক্রান্ত হয়ে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ভর্তি হয়েছিল। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৪-বছর বয়সী ওই কিশোরী করোনা আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ দিল্লির ছতরপুরের বৃহত্তম কোভিড কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ধর্ষণের শিকার হয় সেখানেই ভর্তি এক ১৯-বছরের কিশোর দ্বারা।
ওই কিশোরের এক সঙ্গীও এই ঘটনায় অভিযুক্ত – যে গোটা ঘটনার সময়ে পাহারা দিচ্ছিল এবং ভিডিও রেকর্ডিং করছিল বলে অভিযোগ।
ঘটনাটি গত ১৫ জুলাই তারিখের হলেও এখন সামনে এসেছে।
দক্ষিণ দিল্লির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পারভিন্দর সিং বলেন, “আমাদের কাছে অভিযোগ আসার পরে প্রাথমিক তদন্ত করে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছি।
“তারা বিচারবিভাগীয় হেফাজতেই আছে, কিন্তু তারাও কোভিড আক্রান্ত, তাই তাদের একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ওই কিশোরীটিকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার মেডিকেল পরীক্ষাও হয়েছে।”
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে যে কয়েকদিনের ব্যবধানে ওই কোয়ারেন্টিন সেন্টারে সামান্য উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া ওই কিশোরীর সঙ্গে অভিযুক্তদের পরিচয় হয়।
সেই সুযোগেই দুই কিশোর ১৫ জুলাই তাকে ডেকে নেয় এবং এদের একজন একটি ফাঁকা ঘরে তার ওপর নির্যাতন চালায়।
এই অস্থায়ী কোয়ারেন্টিন সেন্টারটি বিশ্বের বৃহত্তম। এটি ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ এটি পরিচালনা করে।
হাসপাতালে ১০ হাজারেরও বেশি শয্যা থাকলেও মাত্র ২৫০ জন এখন ভর্তি আছে – তাই নিরাপত্তা রক্ষী এবং স্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যাও কম।
নারী আন্দোলনের কর্মী ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ভারতী মুৎসুদ্দি বলছিলেন, করোনার মতো একটা মহামারির পরিস্থিতিতেও এরকম ঘটনা হচ্ছে, সেটা অচিন্তনীয়।
“করোনার মতো একটা অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ফলে যাকে হাসপাতাল বা কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানেও যে এরকম ঘটনা হবে, তা ভাবাই যায় না।
“পুরুষ এবং নারীদের এলাকা নিশ্চয়ই আলাদা ছিল না – এক জায়গা থেকে আরেক দিকে নিশ্চয়ই চলে যাওয়া যায় বিনা বাধায়। না হলে একটা কমন এলাকায় কী করে ওই ছেলে দুটি ডেকে নিল মেয়েটিকে!
“সাধারণ হাসপাতালে তো নারীদের ওয়ার্ড আর পুরুষদের ওয়ার্ড আলাদা থাকে, নারীদের ওয়ার্ডে বাড়তি পাহারা থাকে, গেট লাগানো থাকে। এখানে সেসব ছিল না কেন?” প্রশ্ন ভারতী মুৎসুদ্দির।
যারা অপরাধ করেছে, তাদের নিশ্চয়ই শাস্তি হবে, কিন্তু যাদের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় একটি অসুস্থ কিশোরীর এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল, তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন মুৎসুদ্দি।
কোভিড হাসপাতাল বা কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নাবালক-নাবালিকাদের অভিভাবকদেরও থাকার নিয়ম নেই, সেই সুযোগটাই এখানে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন নারী আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ।
“সাধারণ হাসপাতালে আমরা দেখি যে নাবালক বা নাবালিকাদের সঙ্গে একজন অভিভাবককে থাকতে দেওয়া হয়। এখানে যেহেতু সেটা করা যাচ্ছে না, সেই সুযোগটাই নিয়েছে ওই দুটি ছেলে। তারা নিজেরাও অসুস্থ হলেও, আমি নিশ্চিত যে খোঁজ নিলে দেখা যাবে এর আগেও তারা পাড়ায় বা অন্য জায়গাতেও নারীদের এভাবেই শিকার হিসাবেই দেখে এসেছে,” বলছিলেন শাশ্বতী ঘোষ।
দিল্লির এই ঘটনাটির আগে অন্তত তিনটি ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে করোনা আক্রান্ত রোগিণীরা কোয়ারেন্টিন সেন্টার বা কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেই নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
নভি মুম্বাই, পাটনা এবং উত্তরপ্রদেশের ওই তিনটি ঘটনা হয়েছে, যার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ঘটনাটিতে এক চিকিৎসক নিজেই করোনা আক্রান্ত রোগিণীকে রাত্রিবেলায় নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ। বিবিসি