জোটসঙ্গী জামায়াতকে মাইনাস নিয়ে বিএনপিতে চাপান-উতোর দীর্ঘ দিনের। এতোদিন দুটি মতই ছিল প্রবল। কিন্তু বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা এখন এ ব্যাপারে অনেকটা একমত হয়েছেন। শনিবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াত ত্যাগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দুই/এক জন বাদে স্থায়ী কমিটির সব সদস্যই ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার পক্ষে মত দেন। এ ব্যাপারে এখন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ ব্যাপারে ইতিবাচক।
জামায়াতের সঙ্গে দুই যুগের জোট রাজনীতি আখেরে বিএনপির উপকার না ক্ষতির কারণ হয়েছে এ নিয়ে দলটিতে অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলছে। দলটির একটি অংশের মত হলো, এ সম্পর্কে লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি।
বিশেষকরে যুদ্ধাপরাধ এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির মতো ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পর জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক বিএনপির কোনো উপকারে আসেনি। ভূ-রাজনীতিতে এ কারণে বিপাকে পড়তে হয়েছে বিএনপিকে। কারণ আঞ্চলিক প্রভাবশালী রাষ্ট্র কখনই জামায়াতের ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত পোষণ করেনি। পশ্চিমা দেশগুলোও বিএনপিকে অনেকবারই পরামর্শ দেয় জামায়াত ত্যাগের। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর জামায়াতের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশ একসময় জামায়াতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিল, তারাও দলটির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে। মূলত পলিটিক্যাল ইসলাম প্রশ্নে বিশ্বব্যাপী নীতির কারণেই ওইসব রাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে জামায়াতকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়। অন্যদিকে, দেশীয় রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধের ইস্যুটি প্রবলভাবে ফিরে আসে ফখরুদ্দীন জমানায়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এই কার্ড সমবসময়ই ব্যবহার করেছে। শাহবাগের উত্থান জামায়াতের রাজনীতিকে চূড়ান্ত কোণঠাসা অবস্থায় নিয়ে যায়। জামায়াতের দায় নিতে হয় বিএনপিকেও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল ভোটের হিসাবের কারণেই জামায়াতকে কাছে টানার নীতি ছিল বিএনপির। কিন্তু গত এক দশকে এ হিসাব মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। বরং রাজনীতিতে অন্যান্য ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। এই কারণেই বিএনপি শেষ পর্যন্ত জামায়াত ত্যাগের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে। সূত্র বলছে, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এটা অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, জামায়াতকে জোটে রেখে আদতে কোনো লাভ নেই। তাছাড়া, বিএনপির পরামর্শক হিসেবে পরিচিতি বুদ্ধিজীবীদের যে অংশটি বিএনপি-জামায়াত ঐক্যের ওপর জোর দিতেন তারাও এখন বিএনপিতে গুরুত্ব হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে অতীতে এমন সিদ্ধান্ত অনেকক্ষেত্রেই বিএনপি কার্যকর করতে পারেনি। এবার কী হয় সেটাই দেখার বিষয়।