ঢাকা: দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী আর দলকে ব্যবহার করে যারা অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতা করছেন তাদের চিহ্নিত করা হবে। সাংগঠনিকভাবে এ ধরনের নেতাদের খুঁজে বের করবে আওয়ামী লীগ। দলের কিছু নেতার কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা জানান, দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত কয়েকজনের কারণে আজ আমাদের কপালে কালিমা লাগছে। অথচ আমাদের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকায় দেশের মানুষ আজ সবচেয়ে বেশি শান্তিতে আছেন। দেশে কোনো ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। করোনা ভাইরাস সহ বন্যা, ঝড় সবকিছু সুন্দরভাবে মোকাবিলা করে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে।
দলের নেতারা জানিয়েছেন, দলের ভেতরে থেকে যারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে খোঁজখবর নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি এখন থেকে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যেকোনো ধরনের কমিটিতে কাউকে সিলেক্ট করার আগে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। একই সঙ্গে অতীতে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পরিবারের ভূমিকা বিবেচনা করা হবে। এদিকে হাইব্রিড আর অনুপ্রবেশ ইস্যুতে তোলপাড় চলছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে। যাদের হাত দিয়ে আওয়ামী লীগে ক্ষতিকর অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সেসব নেতা আতঙ্কে আছেন। দায় এড়াতে গা বাঁচিয়ে চলছেন অনেকে।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব অনুপ্রবেশ হয়েছে তার খোঁজ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নেতারা বলছেন, সাহেদরা যে দরজা দিয়ে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে, সেসব দরজা বন্ধ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান মানবজমিনকে বলেন, গত ছয় মাস আমাদের ভীষণ তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। দলের কয়েকজনের কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। পাশাপাশি বিতর্কিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল বিএনপি’র সদস্যরা এ নিয়ে কঠোর সমালোচনার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রয়েছে কোটি কোটি সদস্য। এর মধ্যে ২/৫ জন খারাপ হতেই পারে। দলের সিলেকশনেও ভুল হতে পারে। তবে ধরা পড়ার পর আমরা তাদের কাউকে প্রশ্রয় দেইনি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যাকে দলে আনা হয়েছে সে আগে ভালো ছিল। তার ওই ভালো গুণের কারণে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু পরে সে দলের ব্যানার কাজে লাগিয়ে আদর্শ বিরুদ্ধ কাজ করছে। আবার এমন অনেকে আছে আগে খারাপ ছিল কিন্তু দলে যোগ দেয়ার পর আদর্শ নিয়ে দলের ভাবমূর্তি উন্নত করার কাজ করেছে। ফারুক খান বলেন, কেবিনেট সদস্য লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ বরখাস্ত করেছে। অনিয়ম ধরা পড়ায় দলের এমপি কারাগারে থেকেছে। এ ধরনের অনেক উদাহরণ তৈরি করেছি। তবে গত কয়েক মাসের শিক্ষা নিয়ে আমরা সতর্ক হয়েছি।
এখন থেকে দলে যে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করার আগে বিশেষ বিশ্লেষণ করে তারপর অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে শাহেদকে নিয়ে আমাদের সমালোচনা করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে শাহেদ আমাদের দলের কেউ নন। তার প্রশ্রয়ের নেপথ্যে মিডিয়া সংশ্লিষ্টদেরও বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করি। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ইস্যুতে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, দলের ভেতরে বর্ণচোরা সেজে যারা অর্থসম্পদ বৃদ্ধির চেষ্টা করে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করবে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। দলে এসেই যারা দলের নাম ভাঙিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নেয় তাদের কাউকে ভাগ্য বদলাতে দেয়া যাবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মীদের পেছনে রেখে, আওয়ামী লীগে আশ্রয়ী, লোভী, ষড়যন্ত্রকারীদের আর সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতা মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দুর্নীতিবাজ ও অনুপ্রবেশকারীদের মূলোৎপাটনের কাজ শুরু করেছে। দলের কোনো নেতা এসব অনুপ্রবেশকারীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকলে তাও বের হয়ে আসবে। দলের দুয়েকজন নেতা যদি অনুপ্রবেশে প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন সে বিষয়টিও নেত্রী দেখবেন। এদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা হাইব্রিডের চেয়ে অনুপ্রবেশকে বেশি ভয়ঙ্কর মনে করছেন। কারণ অনুপ্রবেশকারীরা নিজেদের আদর্শের কৌশলী জাল বিস্তারের জন্য দলে প্রবেশ করে। নিজেদের মৌলিক উদ্দেশ্য গোপন রেখে অন্য একটি দলে প্রবেশ করে দলের তথ্য সংগ্রহ করে অথবা দলের রাজনীতি নিজেদের আদর্শিক পন্থায় প্রভাবিত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে তারাই অনুপ্রবেশকারী। আর হাইব্রিড নেতৃত্ব বেশির ভাগ সময় সমগোত্রীয় আদর্শের রাজনীতি থেকে উঠে আসে। হাইব্রিড নেতাকর্মীরা দলের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব তৈরির কাঠামোর সীমাবদ্ধতা পুঁজি করে উপরের স্তরের নেতাদের আশীর্বাদে তাড়াতাড়ি নেতৃত্বে চলে আসেন। অনেক ক্ষেত্রে দলের প্রয়োজনে হাইব্রিড নেতৃত্ব তৈরি করা হয়। হাইব্রিড নেতা তৈরির প্রক্রিয়াটি সাধারণত নির্বাচনের সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হাইব্রিড সম্প্রদায় রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে আগ্রহী নয়। যেসব হাইব্রিড নেতা দলে স্থান করে নিয়ে দলটির মূলধারার নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে অঢেল সম্পদ বাগিয়ে নেন, দলের সংকটে পাশে থাকেন না, তারা দলের জন্য ক্ষতিকর।