অবরোধের ১৫ দিনে সাত হাজার ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম রেঞ্জে সবচেয়ে বেশি এক হাজার পাঁচ শ’ ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে রাজশাহী রেঞ্জের অবস্থান। এ রেঞ্জে এক হাজার ১২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বরিশাল রেঞ্জে সবচেয়ে কম ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ছাড়া অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১১ জন এবং অন্যান্য ঘটনায় আরও ১১ জনসহ মোট ২২ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ ও র্যাবকে সহায়তার জন্য ১২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে গ্রেপ্তার ও নিহতের সংখ্যা, বিজিবি মোতায়েন এবং পেট্রলবোমা ও ককটেল নিক্ষেপের এসব চিত্র আলোচনার জন্য উঠবে। সারা দেশে গত ১৬ দিন ধরে চলা অবরোধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এ জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী ৫ই জানুয়ারি থেকে ১৯শে জানুয়ারি পর্যন্ত পেট্রলবোমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ২৩টি, ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ৮৪টি, অগ্নিদগ্ধে আহত হয়েছেন ৩৮ জন এবং অন্যান্যভাবে আহত হয়েছেন ১৯২ জন। সব মিলিয়ে আহত হয়েছেন ২৩০ জন। ছয় মেট্রোপলিটন পুলিশ ও আট রেঞ্জের গ্রেপ্তারের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৫ই জানুয়ারি সবচেয়ে বেশি ৯২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ৬ই জানুয়ারি ৩২৫ জন, ৭ই জানুয়ারি ২৯৭ জন, ৮ই জানুয়ারি ৩০৩ জন, ৯ই জানুয়ারি ৩৪৩ জন, ১০ই জানুয়ারি ৭০৪ জন, ১১ই জানুয়ারি ৫৬৬ জন, ১২ই জানুয়ারি ৫৩৬ জন, ১৩ই জানুয়ারি ৫৩৩ জন, ১৪ই জানুয়ারি ৫৫৬ জন, ১৫ই জানুয়ারি ৪৫৯ জন, ১৬ই জানুয়ারি ৩৭৯ জন, ১৭ই জানুয়ারি ৩২৫ জন, ১৮ই জানুয়ারি ৩৭৬ জন এবং ১৯শে জানুয়ারি ৩৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ৫২০ জন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ৩২৬ জন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ ১৮১ জন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ৯৫ জন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ ১১৯ জন, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ১১৬ জন, ঢাকা রেঞ্জ ৯৪৬ জন, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ১৫৯৩ জন, রাজশাহী রেঞ্জ ১১২৩ জন, রংপুর রেঞ্জ ৫৯২ জন, খুলনা রেঞ্জ ৭৫৩ জন, বরিশাল রেঞ্জ ১২২ জন, সিলেট রেঞ্জ ৫২৫ জন এবং রেলওয়ে রেঞ্জে চার জনসহ সব মিলিয়ে ৭০১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং যাত্রী ও রেললাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১২ই জানুয়ারি ভোর ছয়টা থেকে আট হাজার ৩২৮ জন আনসার ভিডিপি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা দেশের দুই হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথে এক হাজার ৪১টি স্পর্শকাতর পয়েন্টে পাহারায় নিয়োজিত আছেন। রেলের অপারেশন শাখা সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম রেল অঞ্চলে ৩৩৪টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়মিত চলাচল করছে। এসব ট্রেন চলাচল করছে ৩০-৩৫ কিলোমিটার গতিতে। এর আগে এসব ট্রেনের স্বাভাবিক গতি ছিল ৭০-৮০ কিলোমিটার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্যই জরুরি ভিত্তিতে ডাকা হয়েছে। দুই দিনের মধ্যে মন্ত্রী ও কমিটির সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গতকাল তাদের কাছে কার্যপত্র পাঠানো হয়েছে। তাই অবরোধই আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার মূল আলোচ্য বিষয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।