রাতুল মন্ডল নিজস্ব প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের তালতলী গ্রামকে বলা হতো বিশুদ্ধ বাতাস অর্থাৎ অক্সিজেন কারখানা। এ গ্রামের আশপাশে বন বিভাগের শ্রীপুর রেঞ্জ অফিসের আওতায় তেলিহাটি, তালতলী ও সাইটালিয়া গ্রামের কয়েকশত একরের সংরক্ষিত বনা ল থাকায় বিশুদ্ধ বাতাস কারখানা ভাবা হতো। বর্তমানে ওই গ্রামে বিভিন্ন গাছের লাকড়ী পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদনের চুল্লির ধোঁয়ায় ধ্বংস হচ্ছে ওই এলাকার পরিবেশ, হারিয়ে যাচ্ছে বনের পাখি ও বিভিন্ন জাতের প্রাণী।
স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুর রেঞ্জ অফিসের আওতায় তেলিহাটি, তালতলী ও সাইটালিয়া গ্রাম নিয়ে কয়েকশত একরের সংরক্ষিত বনা ল। সম্প্রতি সংরক্ষিত বনা লের পাশে চুল্লি স্থাপন করে রাতের আঁধারে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা শতশত টন লাকড়ী পুড়িয়ে তৈরী করা হচ্ছে কয়লা। কয়লা তৈরীর সৃষ্ট চুল্লির ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কীট-পতঙ্গ, প্রাণী ও পাখি আবাসস্থল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও আশপাশের বনের গাছগুলো শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। আর এই চুল্লি স্থাপন করে বনা ল ও পরিবেশ ধ্বংসে মেতেছে তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ওয়ার্র্ড সদস্য স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা জয়নাল হাজারী, জামাল উদ্দিন, আজিজুল, জাকির হোসেন, মুজিবুর রহমান, ফিরোজ মিয়া ও নুরুল ইসলাম। ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান করে এসব চুল্লি ভেঙ্গে দিলেও পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার জানান, সংরক্ষিত বনা লের গহিন অরন্যে ঘেরা এই তালতলি গ্রাম এখন আর আগের অবস্থানে নেই।একদিকে বনের গাছপালা উজাড় হয়ে বনভূমি দখল হচ্ছে অপরদিকে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন করে ব্যবসা করছে একটি চক্র। গ্রামটিতে অসংখ্য মানুষের বসবাস। এসব চুল্লির কালো ধোঁয়া ও কয়লা তৈরীর কারখানা গড়ে তোলায় পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। স্থানীয়দের প্রতিবাদের কারনে ইতিপূর্বে একবার এসব চুল্লি ভেঙ্গে দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। তবে ফের চুল্লি স্থাপন করা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
সাইটালিয়া গ্রামের আব্দুল কাদের অভিযোগ করেন, সংরক্ষিত বনা লের যেসব প্রাণীদের বাস করার কথা ছিল তা এখন আর নেই। এসব চুল্লির পাশাপাশি বনের ভিতরও বনের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
আগুনের লেলিহান শিখায় প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠে, এসব চুল্লির কালো ধোঁয়ার আচ্ছন্ন হয়ে থাকে স্থানীয় এলাকা। অনেক গাছপালা মারা যাচ্ছে, বসবাসের স্থান হারাচ্ছে প্রকৃতির প্রাণীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সমস্ত পৃথিবীতে নানা ধরনের কর্মসূচী চলমান থাকলেও আমরা নিজেরাই চোখের সামনেই প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করছি। এসব অবৈধ কর্মকান্ডের বিষয়ে জরুরী ভিক্তিতে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড সদস্য জয়নাল হাজারী জানান, দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের অনেকেই চুল্লি স্থাপনের মাধ্যমে কয়লার ব্যবসা করে আসছেন। তাদের দেখাদেখিতেই আমিও কয়েকটি চুল্লি স্থাপন করেছি। এগুলোর কোন অনুমোদন প্রয়োজন আছে বলে তার কিছু জানা নেই। তবে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের মাঝে মধ্যে কিছু দিতে হয়।
শ্রীপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা (ফরেষ্ট রেঞ্জার) আনিসুল হক জানান, সংরক্ষিত বনা লের পাশে কেউ এভাবে কয়লা তৈরীর চুল্লি স্থাপন করতে পারে না, এটা অবৈধ। তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন জানান, এসব কয়লা তৈরীর কারখানার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। জনসংখ্যার ঘনত্ব এলাকায় ধোঁয়া তৈরী করে পরিবেশ দূষণ করে থাকলে তা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফিন জানান, পরিবেশ দূষনের কারণে ইতিপূর্বে অভিযাণ করে এসব চুল্লি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। আবার যদি তারা তা স্থাপন করে তাহলে ফের ব্যবস্থা নেয়া হবে।