।। ওসমান গনি।।
বাংলাদেশের মানুষের প্রধান পেশা হলো কৃষি। আর এ কৃষি পেশাটাই বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তির একটি প্রধান উপাদান। যেহেতু কৃষি বাংলাদেশের মানুষের প্রধান পেশা সেহেতু করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগ মুহুর্তে দেশের অর্থনীতি কে সচল রাখতে হলে সবার আগে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আজ করোনাভাইরাসের কারনে যেখানে বিশ্বের অর্থনীতি ভগ্নদশা সেখানে আমাদের গরীব দেশের প্রধান পেশা কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশের ভগ্নদশা অর্থনীতি কে সচল করে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য এ দেশের কৃষি পেশার সাথে জড়িত কৃষকদের কে একটু বেশীই মূল্যায়ন করতে হবে।
দেশের অর্থনীতি সংকট মোকাবেলা করতে হলে কৃষি পেশার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মানুষের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে কৃষি ও কৃষক। আমাদের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ এবং শ্রমশক্তি ৬০ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৮ কোটির অধিক এবং এটি বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশগুলোর একটি এবং সে সঙ্গে একটি সম্ভাবনাময় বড়ো বাজার। দেশের সম্ভাবনাময় এই বাজারের সঠিক ব্যবহারের প্রকৃত সময় এখন।
মানুষের জীবনের ৫টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি চাহিদা হলো খাদ্য। দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা রাষ্ট্রের একটি কাজ। মানুষকে বেচে থাকতে হলে সবার আগে প্রয়োজন খাদ্য। খাদ্য ছাড়া মানুষের বেচে থাকা অসম্ভব। তাই যে কোনো দুর্যোগে সবার আগে মানুষ এগিয়ে আসে খাদ্য সহায়তা নিয়ে। আগে বাঁচার ব্যবস্থা তারপর অন্যকিছু।
বর্তমানে করোনাকালে বাংলাদেশ সহ আজ সারাবিশ্ব আজ এক অস্থির সময়ের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ কোন না কোনভাবে বেচে থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর থেকে বাংলাদেশ বাদ যায়নি। এই মুহুর্তে বাংলাদেশ সহ বেচে থাকার প্রধান পেশা কৃষির প্রতি সবচেয়ে বেশী নজর দিতে হবে। দেশের সকল আবাদি অনাবাদী চাষযোগ্য জমি চাষের আওতায় এনে ফসল চাষের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য দেশের সরকার প্রধানকে কৃষির জন্য প্রচুর আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ সেগুলো প্রয়োজন মোতাবেক কিছুটা হলেও পৌঁছে দিতে পারছে।
এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বোরোধানের ফলনও বাম্পার হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকার কারনে কৃষকরা করোনার ভয়ভীতি কে উপেক্ষা করে সহিসালামতে ফসল ঘরে তুলতে পারছে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফলনও বাম্পার হয়েছে। দেশের ২ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানেরও বাম্পার ফলনও আশানুরূপ হয়েছে বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
দেশের কৃষিপণ্যের মধ্যে মাছ-মাংস, সবজি, দুধ, ডিম ও অন্যান্য শস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের কৃষকের সাফল্য বলে শেষ করা যাবে না। কয়েকটি কৃষিজ উৎপাদনে বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। কৃষক কিন্তু রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে আছে। এই মুহূর্তে তাদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কৃষকের চলমান কৃষি কাজ যদি অব্যাহত রাখা যায় তাহলে বাংলাদেশ শত প্রতিকুলতার মাঝে ও কমপক্ষে কোন রকমে টিকে থাকার একটা ব্যবস্থা হবে। তানাহলে দেশ অর্থনৈতিক সংকটে একবার পড়ে গেলে ঘুরে দাঁড়ানো টা অসম্ভব হয়ে পড়বে। খাদ্যের জন্য সারাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। দেশের মধ্যে সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন প্রবাহে চরম নৈরাজ্য দেখা দেবে। কৃষক যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কৃষককে পরবর্তী উৎপাদনে মনোনিবেশকল্পে উৎসাৎ প্রদান করতে হবে।
সবশেষে কথা হলো দেশের প্রত্যন্তঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় যত আবাদি অনাবাদী ও পতিত জমি আছে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি সচল রাখতে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে চাষের আওতাভুক্ত করতে হবে। পুকুরে মাছের চাষ করা ও হাঁস-মুরগি পালন করার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা কৃষি প্রধান দেশের লোক হিসাবে আমাদের পেশার প্রতি সম্মান দেখিয়ে চাষাবাদ চালিয়ে যেতে হবে।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট
E-mail – [email protected]
০১৮১৮-৯৩৬৯০৯। কুমিল্লা।